পুরুষের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কারণ আমাদের রাসুল (সা.) দাড়ি রেখেছিলেন। দাড়ি শুধু আমাদের নবীর নয়, সব নবীরই সুন্নাত। এটি ইসলামের শিআর বা নিদর্শন।
আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় লিহইয়া বা লাহয়া। এর আভিধানিক অর্থ হলো থুতনিসহ মুখের দুই পাশের ওই হাড়, যার ওপর দাঁতগুলো অবস্থিত। প্রাপ্ত বয়সে ওই হাড়ের ওপর যে লোম বা কেশ গজায়, ওই লোম বা কেশগুলোকেই হাড়ের নামকরণে লিহইয়া বলা হয়।
দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর বা নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নাত। হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন (সহিহ মুসলিম ১/১২৯, ২৫৯)
হজরত হাসান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ১০টি স্বভাব এমন ছিল, যেগুলো অবলম্বন করে কওমে লুত ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি দাড়ি কর্তন করা ও গোঁফ লম্বা করা (দুররে মনসুর ৫/৬৪৪)।
বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে আবেদিন শামী বলেছেন- দাড়ি সম্পর্কে মূল কথা হলো, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর শরয়ি পরিমাপ হলো এক মুষ্টি পরিমাণ। দাড়ি রাখা ইসলামের শিআর এবং নিদর্শন। এটি সব নবীর সুন্নাত। এটি ভদ্রতা, মহত্ত্ব এবং ইজ্জত ও সম্মানের আলামত। এর মধ্যেই রয়েছে পৌরুষত্বের পরিপূর্ণতা। এভাবে দাড়ি রাখা নবী করিম (সা.)-এর সার্বক্ষণিক আমল ছিল। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, সালফে-সালেহিনেরও আমল ছিল এরূপ। নবী (সা.) এটিকে ফিতরাত তথা মানুষের প্রকৃতি বলেই আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং দাড়ি রাখা আবশ্যক। চেঁছে ফেলা বা এক মুষ্টির ভেতর কাটা হারাম ও কবিরা গুনাহ।
দাড়ির পরিমাণ কী হবে?
নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের দাড়ি যেভাবে এবং যেটুকু ছিল, সেটুকু রাখাই মূল বিষয়। হাদিস শরিফে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন চিন্তিত হতেন, তখন তিনি নিজ হাতে দাড়ি ধরে তা দেখতেন (কানজুল উম্মাল ১/৭০১)।
হাদিস শরিফে আছে- হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু শিরআতিল ইসলাম-২৯৮)।
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাড়ি মোবারক এক মুষ্টির বেশি ছিল এবং এক মুষ্টি পরিমাণ রেখে বাকিটা কর্তন করা যাবে।
সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি লম্বা রেখেছেন। তবে এক মুষ্টির পর কাটার স্বীকৃতি সাহাবায়ে কেরামের আমলে পাওয়া যায়।
হাদিসের অসংখ্য বাণী থেকে প্রাপ্ত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ, আমল ও সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন তাবে-তাবেইনের আমল, ইমাম ফুকাহা ও মুহাদ্দিসিনের আমল ও দিকনির্দেশনার আলোকে আকাবের উলামায়ে কেরাম দাড়ির ব্যাপারে যে বিধান ঠিক করেছেন তা নিম্নরূপ :
দীর্ঘ আলোচনার পর হজরত খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহ.) লেখেন- দাড়ি কর্তন করা বর্তমান যুগে ইহুদি নাসরাদের শিআর বা নিদর্শনে রূপান্তরিত হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে এমন লোকও তা গ্রহণ করছে, যাদের সঙ্গে দ্বীনের সম্পর্ক নেই। বরং ইংরেজদের রীতিনীতি অনুযায়ী চলাকে তারা পছন্দ করে।
এরপর ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর উক্তি উল্লেখ করেন- দাড়ি মুণ্ডানোর মতো দাড়ি কাটাও হারাম (বজলুল মজহুদ ১/৩৩)।
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফয়জুল বারিতে উল্লেখ আছে- এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা সব ইমামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে হারাম (৪/৩৮০)।
এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর ইসলামিক স্কলারর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর সর্বনিম্ন পরিমাপ এক মুষ্টি। এক মুষ্টির পর দাড়ি কাটার অনুমতি আছে। কিন্তু এক মুষ্টির কমে দাড়ি কাটা অথবা মুণ্ডানো সম্পূর্ণ হারাম।