রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে অসন্তোষ জানিয়েছে রুশ দূতাবাস। দূতাবাস বলেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট ও বিদ্বেষমূলক খবর প্রকাশ করছে। তার ছায়া পড়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে। তারাও একই ধরনের খবর প্রচার করছে।রোববার ঢাকায় নিযুক্ত রুশ দূতাবাস বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর উদ্দেশে একটি খোলাচিঠি দিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়ার লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। কেন ইউক্রেনে এ অভিযান, সে কারণগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতি রাশিয়ার সমর্থনের বিষয়টি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যে পরিস্থিতিতে ছিল, সেই একই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন দোনেত্স্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের বাসিন্দারা। পূর্ব ইউক্রেনের এ দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রুশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের কোনো পরিকল্পনা নেই। রুশ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনের বাসিন্দাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না। কারও ওপরে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা বারবার বলেছি, ইউক্রেন পরিস্থিতি এমনভাবে সামনে এগিয়েছে যে তা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকির সৃষ্টি করেছে।’
ইউরোপে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর উপস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ন্যাটোর শীর্ষ সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসতে ৩০ বছর ধরে চেষ্টা করছে রাশিয়া। এ ক্ষেত্রে মস্কো বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছে।ক্রেমলিনের প্রতিবাদ ও উদ্বেগের পরও ন্যাটো ইউরোপে তাদের সম্প্রসারণ চালিয়ে গেছে। রাশিয়ার সীমান্তের কাছে চলে আসছে জোটটির সামরিক সরঞ্জাম। এসবের পরও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবার সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়। তবে তা বিফলে যায়।রুশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার তত্পরতার মধ্যে ইউক্রেনে নৌঘাঁটি গড়ে তোলা হচ্ছিল। সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের প্রক্রিয়াও চলছিল। এমন পদক্ষেপ রাশিয়ার জন্য সরাসরি হুমকির। এমনকি ইউক্রেনকে পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর দেশ হতেও তাগিদ দিয়েছে ন্যাটো।
ইউক্রেনে অভিযানের সময় রাশিয়ার হাতে বেশ কিছু নথি এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হচ্ছে, ওই নথিগুলো থেকে ইউক্রেনে অন্তত ৩০টি জীবাণু অস্ত্রের গবেষণাগার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে সেখানে মারাত্মক জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা চালানো হচ্ছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনকে হাজার হাজার কাঁধে বহনযোগ্য রকেট লঞ্চারসহ মারণাস্ত্র সরবরাহের পথে হাঁটছিল পশ্চিমা দেশগুলো। এগুলো ‘সন্ত্রাসীরা’ যেকোনো স্থানে বহন ও যেকোনো লক্ষ্যে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এ নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়, এ রকেট লঞ্চারগুলোর শেষ পরিণতি কী হতো? পরে এগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো?
চিঠিতে রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ইউক্রেন পরিস্থিতি ও সেখানে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে বাংলাদেশি নির্দিষ্ট কিছু গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপকে সেসব শক্তির উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করব, যারা সব সময় রাশিয়া ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ককে ধ্বংসের চেষ্টা করেছে।’বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উদ্দেশে মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমার এ খোলাচিঠির মাধ্যমে আপনাদের পাঠকেরা ইউক্রেনসংক্রান্ত ঘটনাবলি পশ্চিমাদের দৃষ্টির বাইরে গিয়ে দেখতে পাবেন।’