ঠেঙ্গার চর ➡ ভাসানচর ➡ পরিকল্পিত আধুনিক শহর এলাকা…..!!!
নগরায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!!
বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ এবং এটি একটি বদ্বীপ। তাই ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপ যে এ দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে তা আর বলার বাকি নেই। ঠিক সেরকমই নোয়াখালীর হাতিয়ার নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে জেগে ওঠা মেঘনা নদীর মোহনার এক দ্বীপের নাম ছিল ‘ঠেঙ্গার চর’।
চর বলতেই আমাদের মধ্যে যে ধারণা আসে তা হলো… চারদিকে নদী বেষ্টিত ও মাঝে এক স্থলভাগ.. চরের মাটি হয় পলিমাটি দিয়ে ভরা। এই মাটি চাষযোগ্য হয় আবার অনেক সময় অনুর্বরও হয়। আবার শুধু ধূধূ বালুর চরও হয়ে থাকে । কিন্তু ঠেঙ্গার চর ছিল বিপুল পলিমাটির কাদাবেষ্টিত। প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের এই চরে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৮০০ একর জমিতে সরকারি ভাবে বনায়ন শুরু হয়েছে। মূলত এই বৈশিষ্ট্যটিই এই চরকে করেছে অন্য চর থেকে আলাদা ও সম্ভাবনাময়।
ঠেঙ্গার চরের নাম করণের কারণ ছিল সেই চরের জেলেরা জাল টানার জন্য গাছের ডাল কেটে হুকযুক্ত এক ধরনের লাঠি ব্যবহার করতেন যার নাম ঠেঙ্গা… সেই থেকেই ‘ঠেঙ্গার চর’।
ঠেঙ্গারচরের উত্তর-পূর্ব দিকে আরও একটি চর আছে। নাম জালিয়ারচর। এটি অনেক পুরোনো চর। বনায়ন করা হয়েছে প্রায় ১৮ বছর আগে। তবে এখানে একটি নামের জটিলতা আছে। জালিয়াচর অনেকে ঠেঙ্গার চরকেও বলে থাকেন। হাতিয়ার আশপাশের চরগুলোর প্রতিটিরই একাধিক নাম রয়েছে তবে জানা যায়। ঠেঙ্গারচরেরও একাধিক নাম রয়েছে। কেউ এটাকে বলে ভাসানচর, কেউ বলে জালিয়ারচর।
বর্তমানে ঠেঙ্গার চরের নামকরণ করা হয়েছে ভাসান চর। আর ভাসানচর এখন আর শুধুমাত্র চরের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়ে উঠা কোনো জায়গা না। এটি হলো বাংলাদেশ নৌবাহিনী কতৃক পরিচালিত একটি প্রজেক্ট এরিয়া যার মধ্যে অতি অল্প সময়ে ঘটেছে অভাবনীয় নগরায়ন ও আধুনিকায়ন!!
ভাসান চরে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশক্রমে ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের রিহ্যাবিলিটেশন এর জন্য আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার মূল তত্ত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এবং মাত্র দুই বছরেই এই আবাসন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয় এবং ভাসান চরকে এনে দেয় এক অন্য রূপ। আর তারপরই মূলত দেশের অন্য প্রান্তের মানুষজনের নজরে আসে এই রিমোট এলাকার চরটি এবং সবার এই চরকে জানার আগ্রহ বেড়ে যায়।
ভাসানচরে পুরো প্রকল্পের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে পরিপূর্ণ অাধুনিক নগরায়নের চিত্র। এখানে শুধুমাত্র দুই বছরে মেগা কনস্ট্রাকশন করা সম্ভব হয়েছে, প্রায় ১৫-২০ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করার ফলে।
ভাসান চর রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য হলো, এই চরকে মানুষের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা এবং এখানকার বসবাসকারীদের সব ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যেই, এখানে তৈরি করা হয়েছে ১০২ টি ক্লাস্টার ভিলেজ হাউজ, সাইক্লোন সেন্টার, বাজার, পুলিশ ক্যাম্প, গবাদি পশুর ফার্ম হাউজ, বিদ্যুৎ সাপ্লাই হাউজ। এখানকার রাস্তা সুবিন্যস্ত ও মোট ৪২ কি মি রাস্তা পুরো এলাকা জুড়ে। আশেপাশের অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত।
ভাসানচরে রয়েছে ‘আশার আলোকবর্তীতা’ নামক একটি লাইট হাউজ। এটিকে এখন ‘Beacon of Hope’ বলা হয়ে থাকে। আসলেই ভাসান চর এক্টি আশার আলো। ভাসান অর্থ হলো, সদা জাগ্রত, সদা নিরাপদ। তাই যেকোন প্রতিকূলতাতেও যাতে শক্তভাবে সর্বদা ভেসে থাকতে পারে এই ভূমিটি সেইভাবেই এটি এখন গঠিত। কোনো প্রকল্পের সত্যিকার বাস্তবায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো এই ভাসানচর।
ভাসান চরকে এখন শুধু আবাসস্থল বল্লে ভুল হবে এটি এখন একটি নগরী। প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শুরু করে পশুপাখি, হাস মুরগি পালন, চাষাবাদ যোগ্য জমি, বিশুদ্ধ বাতাস সবকিছুর পরিবেশ এখানে আছে। রোহিঙ্গাদের সেবা দেয়ার সবরকম ব্যবস্হা এখানে রয়েছে। আর পুরো ব্যবস্হাপনাটি গড়ে তোলা হয়েছে ইকো ফ্রেন্ডলি করে। আর ভবিষ্যতে যাতে এই নগরীতে পর্যাপ্ত বনায়ন করা যার সেই ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে।
তাই বলা যায় যে, এখন ভাসানচর হলো একটি ‘প্লান্ড মর্ডান টাউনশিপ ‘ যা সারি সারি শ’খানেক মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং , প্লেগ্রাউন্ড, ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই, ওয়াটার সাপ্লাই সবকিছু নিয়ে নগরায়িত শহর এলাকা এবং ছবির মতো সুন্দর এই জায়গা সর্বদা রোহিঙ্গাদের সাদরে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
Reporter: Progga