নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্বর্গ ও মর্ত্যের মতো ফারাক। নীতি প্রণয়নের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা কীভাবে বা কতটা বাস্তবায়িত হয়। সে জন্য প্রকৃত অর্থে যা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত সাংবাদিকদের। শুধু কাগজে কী আছে, তা দেখলে হবে না। এ কথা বলেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। রেহমান সোবহান বলেন, নীতি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়ন করা রাজনৈতিক দায়িত্ব। কারণ, অনেক ধরনের মানুষ থাকে, অনেক রকম স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকে—এর মধ্যেই নীতি বাস্তবায়ন করতে হয়। আজ শনিবার ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে নিজের আত্মজীবনী গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ড আনট্র্যাঙ্কুইল রিকালেকশনস: ফ্রম ডন টু ডার্কনেস–এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সায়েদুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান। অনলাইনে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন।অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশে পরিকল্পনা কমিশন নিজের মতো মতামত দিত, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বঙ্গবন্ধু সব সিদ্ধান্ত নিতেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রখর জ্ঞান ছিল বাস্তবভিত্তিক। তাজউদ্দীন আহমদেরও এ বিষয়ে ভালো জ্ঞান ছিল। নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে পূর্বাপর বিবেচনা করতে হয়, তার শিক্ষা তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি।
নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন লেখক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়েনিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন লেখক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। আজ শনিবার
অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল বায়েস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের মহাপরিচালক অধ্যাপক আহরার আহমেদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জায়েদ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাবিবুল হক খন্দকার, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহারুখ মহিউদ্দিন।
রেহমান সোবহানের আত্মজীবনীমূলক নতুন বই সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন বলেন, এ বই বাংলাদেশের রাষ্ট্র গঠনের ইতিহাসের একটি অংশ ধারণ করেছে। রেহমান সোবহান যেমন বিদ্যায়তনের মানুষ ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারও মানুষ ছিলেন। ফলে দুই জগতের সম্পর্ক তিনি চমৎকারভাবে তুলে আনতে পেরেছেন।স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের সময় নিয়ে বেশি কিছু লেখা কিংবা গবেষণা হয়নি বলে জানান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রওনক জাহান। তিনি বলেন, এই বই সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক উৎস হতে পারে।স্বাধীন বাংলাদেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তার রূপরেখা এ বইয়ে উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিকদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল একসময়, তার চিত্র এ বইয়ে পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু পেশাদারদের কাছ থেকেই শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক দেশের রূপরেখা চেয়েছিলেন।অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচকেরা বইটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই নীতি প্রণয়নকারী, রাজনীতিক ও আমলাদের মধ্যে যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব ছিল, তা এই বইয়ে উঠে এসেছে, যা এখনো দেখা যায়।অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেহমান সোবহানের আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ডও ভবিষ্যতে প্রকাশিত হবে। সেখানে দেশের ও নিজের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আরও তথ্য তুলে ধরবেন তিনি।