.
একদিন কথায় কথায় আয়েশাকে বলেই ফেললাম আয়ানের কথা। ইসলামের নিয়ম কানুন মেনে চলতে তার যে খুবই গাফলতি এগুলো আমি আয়োশার সাথে শেয়ার করলাম। তখন সে আমাকে একটি দারুণ বু্দ্ধি দিল। বললো, “আপু, আপনি ভাইয়াকে ম্যানেজ করে একবার তাবলীগে পাঠালে বেশ ভাল হতো। এই কিছুদিন পর, আমার হলের এক আপুর হাজবেন্ড তাঁর দ্বীনি ভাইদের সাথে তাবলীগে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। আপনি চাইলে আমি আপুকে বলে সবকিছু ঠিকঠাক করে দিতে পারি।”
প্রথমে আমি বুঝিনি তাবলীগে গিয়ে কী হয়! মানুষ কেন যায়! আবার আমার এই অসুস্থ অবস্থায় আয়ানকে পাঠাতেও ভরশা পাচ্ছিলাম না। আমাকে এরম অবস্থায় ফেলে সে নিজেও যেতে চাইবে না।
আয়েশা নিজে এর সমাধান দিল। তাবলীগে গেলে আয়ানের গাফিলতি ভাব অনেকটা কমে যাবে, সে দ্বীন বুঝতে শিখবে। আর সে যতদিন বাইরে থাকবে, আয়েশা আমার বাসায় থেকে আমাকে সঙ্গ দিবে।
আমি খুব খুশী হলাম এবং ইস্তিখারার নামাজ আদায় করে নিলাম। আমার মন বার বার বলছে তাবলীগে যাওয়াটাই আয়ানের জন্য বেটার হবে। এরপর আমি আয়ানকে তাবলীগে যাওয়ার কথা জানালাম। সে একবাক্যেই না করে দিল। এরমটা সে আগে কখনই করেনি। সাথে সাথে আমার চোখে পানি চলে আসলো।
আমার চোখে পানি দেখে, সে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আমার ঘাড়ে হাত রেখে শান্তভাবে আমাকে বোঝাতে থাকে। এসময় সে আমার পাশে থাকতে চায়। কোথাও এক সেকেন্ড সময় অপচয় করলেও যেখানে তার নিজেকে অপরাধী লাগে, সেখানে আমাকে ছাড়া থাকা তার কাছে কল্পনারও অতীত।
আমিও তাকে বোঝাতে লাগলাম। আমি ভালো থাকবো, আয়েশা আমার সাথেই থাকবে। আর বেশিদিন তো নাহ্। মাত্র তিনটা দিন। দরকার হলে আমরা প্রায়ই ভিডিও কলে কথা বলবো। আমাদের এই ত্যাগটাই যদি আল্লাহ খুশী হয়ে আমাদের সন্তানের উপর রহমত আকারে বর্ষণ করেন, তাহলে কতই না ভাল হবে!
আরও অনেক বলে কয়ে এক পর্যায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাজি হলো। আমারও একটুও যে খারাপ লাগছে না, সেটা বললে নিজেকে মিথ্যাবাদী বলা হবে। এই প্রথম আমরা আলাদা থাকবো, এটা ভাবতেই আমার বুক ফেটে যাচ্ছিলো। তবুও ওর হেদায়েতের আশায় নিজেকে শক্ত রাখলাম।
ঘনিয়ে এলো সেইসময়। সব ঠিকঠাক, আগামীকাল যাবে সে তাবলীগে। আজ রাতে কারো চোখে ঘুম নেই। তবুও আমি ঘুমের ভান করে চুপচাপ শুয়ে আছি। কিন্তু আয়ান ছটফট করছে। একবার বিছানায় বসছে তো আরেকবার দাঁড়াচ্ছে, এরমভাবে পুরো রাতটা সে পায়চারি করেই কাটিয়েছে। এরপর সব গুছিয়ে নিয়ে যখন বেরুবে, দরজার কাছে এসে আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল।
[চলবে]
Writer: Mahazabin Sharmin Priya