বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় সাত হাজার নারী স্তন ক্যানসারে মারা যান এবং নতুন করে আক্রান্ত হন অন্তত ১৩ হাজার। স্তর ক্যানসার হলেও আমাদের দেশের অনেকে লজ্জা ও টাকার অভাবে চিকিৎসকের কাছে যান না। অনেকে আবার কবিরাজের কাছে যান।
স্তন ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি নির্ণয় করতে পারলে এ রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করতে প্রয়োজন সচেতনতা। বাড়িতে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা আর মাঝে মাঝে স্ক্রিনিং করা যেতে পারে।
নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা
২০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা উচিত। নিজের স্তনে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রতি মাসে একবার, ঋতুমতী নারীদের মাসিক শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করলে ভালো হয়। কারণ, সে সময় স্তন কিছুটা হালকা থাকে এবং ব্যথা কম হয়।
যেভাবে পরীক্ষা করতে হবে
প্রথমত, পরিষ্কার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোয় নিজের শরীরের দিকে লক্ষ্য করুন। দুই বাহু দেহের দুই পাশে ঝুলিয়ে রাখুন। বাহুদ্বয় মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচিয়ে ধরুন। দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যাতে বুকের মাংসপেশি টানটান হয়। স্তনবৃন্ত হালকা করে একটু চাপ দিয়ে দেখতে হবে কোনো রস বের হয় কি না। লক্ষ করুন, স্তনের আকার, আকৃতি ও রঙের কোনো পরিবর্তন, দুই স্তনের কোনো তারতম্য, স্তনের ত্বকের কোনো পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত ভেতরে দেবে গেছে কি না, বৃন্তসংলগ্ন এলাকায় ত্বকের অস্বাভাবিকতা আছে কি না এবং স্তনবৃন্ত থেকে নির্গত তরলের রং।
দ্বিতীয়ত, হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিছানায় শুয়ে ডান হাত দিয়ে বাঁ স্তন এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান স্তনে হাত দিয়ে দেখুন। যে পাশের পরীক্ষা করতে হবে, সে পাশের হাত মাথার ওপরে রাখতে হবে, কাঁধের নিচে ছোট বালিশ বা তোয়ালে ভাঁজ করে দিতে হবে, যাতে বুক ও স্তন একই সমান্তরালে থাকে। অন্য পাশে অল্প কাত হয়ে শুতে হবে। এবার তিন আঙুলের প্যাড দিয়ে প্রথমে একটু হালকা চাপ, পরে আরও ভারী চাপ, এরপর আরও চাপ দিয়ে স্তন সীমানার পুরো এলাকা অনুভব করতে হবে। গোসলের সময় দাঁড়িয়ে, শরীরে সাবান মেখে একই ভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
এ ছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসককে দিয়ে ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি তিন বছরে একবার এবং ৪০ বছর পার হলে প্রতিবছর একবার স্তন পরীক্ষা করানো উচিত।
এর বাইরে চিকিৎসকের পরামর্শে ম্যামোগ্রাফি এবং রেডিওলজি ও ইমেজিং পরীক্ষা (আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই) করা যেতে পারে। এসব পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এফএনএসি অথবা কোর বায়োপসি করে রোগ শনাক্ত করা হয়।