নারায়ণগঞ্জে রাসায়নিকের কারখানায় অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহার হলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত ‘ফায়ার ফাইটিং রোবট’। আজ মঙ্গলবার আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা এলাকার এইচপি কেমিক্যাল কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে রোবটটি ব্যবহারের ফলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জে কাছাকাছি সময়ে লাগা আগুনে একটি রাসায়নিক কারখানার উৎপাদন প্ল্যান্ট এবং একটি সুতা তৈরির কারখানার তুলা ও যন্ত্র পুড়ে গেছে। আজ বেলা সোয়া একটায় রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা এলাকার নান্নু স্পিনিং মিলসে এবং বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে সেখান থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বে দুপ্তারা এলাকার এইচপি কেমিক্যাল কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ড হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে দুটি কারখানায় ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট কাজ করে। রাসায়নিক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে ‘রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট’। কারখানা দুটির কোনোটিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল সোয়া পাঁচটায় এইচপি কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম দুটি অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এইচপির আগুন ভয়াবহ হতে পারত বলে মনে করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কারখানাটিতে হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড তৈরি করা হয়। মূল প্ল্যান্টেই আগুন লাগে। সেখানে প্রায় ২৫০ টনের মতো ট্রাইমিথাইল বেনজিন, পটাশিয়াম কার্বোনেট, ফসফরিক অ্যাসিড মজুত ছিল। পাশেই প্রায় সাড়ে ৪০০ টনের মতো হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড মজুত ছিল। সেগুলো আগুন থেকে মুক্ত রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসে মাত্র দুটি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবট আছে। আজ রাসায়নিক কারখানায় তার একটি ব্যবহার হয়েছে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, বেলা একটায় নান্নু স্পিনিং মিলে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিটের চেষ্টায় বেলা তিনটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বেলা দেড়টার দিকে এইচপি কেমিক্যালে আগুনের খবর পান। কাছাকাছি দূরত্বের হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি ইউনিট কেমিক্যাল কারখানায় চলে আসে। পরে ১২টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, অত্যাধুনিক রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং রোবটটির নাম লুফ ৬০। অনেক সময় ফায়ার ফাইটার বা অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা তাপের কারণে আগুনের কাছাকাছি যেতে পারেন না। এই রোবটকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আগুনের অনেক কাছে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলের যেখানে ফায়ার ফাইটারদের পৌঁছানো সম্ভব হয় না সেখানেও এই রোবট পাঠানো যায়। এটি দ্রুতগতিতে পানি নিক্ষেপের মাধ্যমে অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে।
এইচপি কেমিক্যালের বিপণন বিভাগের প্রধান (হেড অব সেলস) বাকি উল্লাহ বলেন, কারখানায় সব মিলিয়ে শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। তবে আজকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় ভেতরে তেমন শ্রমিক ছিলেন না। আগুন লাগার কারণ জানতে পারেননি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এখনই বলা যাচ্ছে না।
কারখানাটির বৈদ্যুত্যিক শাখার একজন কর্মী রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‘জোহরের নামাজের পরপরই আমি খাবার খেতে বসি। তখন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই। বেরিয়ে এসে দেখি প্ল্যান্টের জিরো পয়েন্টে (নিচতলায়) আগুন। ভেতরে প্রচুর কেমিক্যাল থাকায় আগুন মুহূর্তেই ২৮ মিটার উচ্চতার প্ল্যান্টে ছড়িয়ে পড়ে।’
এদিকে বিকেলে নান্নু স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, কারখানাটিতে দুই পালায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ভোর ছয়টা থেকে শুরু হওয়া প্রথম পালার শেষ দিকে বেলা একটায় কারখানাটির ১ নম্বর ইউনিটের চারতলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনটির নিচতলায় কর্মরত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হঠাৎ একজন নারী শ্রমিক ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার দিলে সিলিংয়ে তাকিয়ে আগুন দেখি। দৌড়ে জেনারেটর কক্ষে গিয়ে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করাই।’
কারখানার সহকারী প্রকৌশলী মো. আশিক বলেন, ‘যেখানে আগুন লাগে, সেখানে তুলা বাছাই করে প্রেসে দেওয়ার কাজ হতো। আগুন লাগার পর সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে শ্রমিকেরা বেরিয়ে যান এবং আমাদের কারখানার ফায়ার কর্মীরা আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন। একই সময় ফায়ার সার্ভিসেও খবর দেওয়া হয়। কারখানায় যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’