ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘পরস্পর পরস্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ রেখে এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে বেনিফিটগুলো (ফায়দা) ভাগাভাগি করে সম্পর্ক করি। দেশের কোনো স্বার্থ সেক্রিফাইস (বিসর্জন) করে আমরা সম্পর্ক করি না। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ অপপ্রচার করে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে।’
আজ শনিবার সিলেট নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকায় ভারত সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সাত টাকা লাগে। সেখানে ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমরা ক্রয় করি সাড়ে পাঁচ টাকায়। এখানে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। কিন্তু কিছু মহল এটিকে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।’
ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক উল্লেখ করে মো. তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ভারত আমাদের ৭১-এ স্বাধীনতাযুদ্ধে সাহায্য করেছে। এ কারণে আমরা তাদের কোনো খারাপ কাজকে সমর্থন করব না। কিন্ত এর অর্থ এই নয় যে তাদের সঙ্গে আমরা শত্রুতামি করব। তাদের বিপদে ফেলব না, ক্ষতিকর হব না। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রাশিয়া সাহায্য করেছিল। অনেকগুলো বন্ধুপ্রতিম দেশ আমাদের সাহায্য করেছিল। আমরা যদি মানুষ হই, তবে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞতাবোধের কথা ভুলে যাব কেন?’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাসড়ক হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সফরকালে তিনি এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। তাদের পক্ষ থেকেও সেটি অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে। এটি হয়ে গেলে সিলেটের তামাবিল দিয়ে তিন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। এতে ব্যবসার উন্নতি হবে।
সিলেট নগরের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে জাদুঘরের পাশাপাশি ভেঙে উদ্যান করার জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন ছিল। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটি ঐতিহাসিক জানিয়ে তিনি বলেন, এ কারাগারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কারাবাস করে গেছেন। সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা কারাগারকে উন্মুক্ত পার্ক করার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। সিলেট ভারতের শিলং শহরের পাশাপাশি এলাকা। সিলেটের এ প্রকল্পগুলোতে ভারত অংশীদার হতে পেরে গর্ববোধ করছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত তিনটি প্রকল্পের দিক তুলে ধরেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। প্রকল্প তিনটি হচ্ছে সিলেট নগরের ঐতিহ্যবাহী ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন, ছয়তলাবিশিষ্ট চারাদিঘীরপার স্কুল ও কাস্টঘর সুইপার কলোনি নির্মাণ। এ তিন প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
ধোপাদিঘীর সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বসার জন্য রয়েছে বেঞ্চ। পুকুরে নামার জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘাট। পুকুরের নোংরা পানিকে পরিষ্কার করা হচ্ছে। নৈসর্গবিদের পরামর্শে গাছ লাগানো হবে। স্থাপন করা হয়েছে পাবলিক টয়লেট।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।
এদিকে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় নগরের চালিবন্দর এলাকায় ভারত সরকারের অর্থায়নে উমেশ চন্দ্র নির্মলা বালা ছাত্রাবাসের পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। ছাত্রাবাসের সভাপতি সুশেন্দ্র কুমার পালের সভাপতিত্বে ও চন্দন দাশের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ভারতের সহকারী হাইকমিশানর নিরাজ কুমার জয়সওয়াল।