বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার নির্যাতন করে, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যা-মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো চাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ সারা দুনিয়া জেনেছে, এ দেশে মানবাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই।বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, নির্যাতন করে, নিষ্পেষণ করে, মুখ বন্ধ করে রেখে বোধ হয় পার পেয়ে যাচ্ছি। পার পেয়েছে? পায়নি। আজকে সারা দুনিয়া জেনেছে, এ দেশে মানবাধিকার নেই।’
যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘অর্থাৎ এটা স্বীকৃত যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এখন আমাদের বলার দরকার হয় না যে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। আর যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এটা আমরা কতবার বলেছি, গুম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কত হিসাব দিয়েছি, কী পরিমাণ মামলা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে, ১ লাখের বেশি মামলা, ৩৫ থেকে ৩৬ লাখের মতো আসামি—একটা গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না।’খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি (রাজস্ব) দপ্তর থেকে আজকে এই বাংলাদেশের একটি সংস্থার ওপরে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। কতগুলো হাই অফিশিয়ালের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এটা কিন্তু গৌরবের বিষয় নয়। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।’খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘকে চিঠি দিয়ে বলেছে, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যেন র্যাবের সদস্যরা যেতে না পারেন। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই লজ্জার ব্যাপার। এ লজ্জা ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে এভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছে কারা? আজকের সরকার। কেন? শুধু গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে তাঁর আদর্শকে যদি ভালোভাবে ধারণ করা যায়, তাহলে তাঁদের বক্তৃতা দিয়ে বলতে হবে না যে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।জিয়াউর রহমানকে সফল সৈনিক, রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনায়ক বলে উল্লেখ করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, সেখানে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া সফল হয়েছেন। সে জন্যই তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ভয় পায়।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপিকে দায়িত্ব নিতে হবে। যদি আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারি, আমাদের গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব না। তাই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
জনগণের সরকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’আবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, পত্রিকায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেখেছেন। তিন গুণ মূল্যবৃদ্ধির এ প্রস্তাবের তাঁরা তীব্র বিরোধিতা করেন।খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ সরকার অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে শোষণ করছে। তারা ইতিমধ্যে তেল–বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এ সরকার জনগণের সরকার নয়, তাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। অতএব এসব অনাচার থেকে রক্ষা পেতে হলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান সভার সঞ্চালনা করেন। এ সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, শহীদুল ইসলাম, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম প্রমুখ।