রৌদ্রের তাপদাহে অতিষ্ঠ হবার আজ ২৯তম দিন, অর্থাৎ আজ ২৯ শে বৈশাখ। প্রতিদিনকার মতো আজ সকালে জানালা গলে চোখ ধাধানো আলো আসেনি, আসেনি আগুনঝরা সূর্যের উত্তাপ।
শান্ত সকালকে অশান্ত করে তুলেছে পাখিদের গুঞ্জরন। আমার কেন যেন খুব ভালো লাগছে। ঘুমহীন চোখের পাতা এক করে শুয়ে আছি। মনোযোগী শ্রোতার মত শুনছি পাখিদের কলকাকলি। কিছু সুপরিচিত পাখির কন্ঠস্বর আমি বে..শ চিনতে পারছি।
শিস দিয়ে যাচ্ছে দোয়েল, অনুভব করতে পারছি পুকুরপাড়ে হেলে যাওয়া কাঁঠাল গাছটায় বসে কয়েকজোড়া শালিক অনবরত ঝগড়া করছে, শুনতে পাচ্ছি বাড়ির সামনেই ঘুঘু ডেকে যাচ্ছে করুণ সুরে; তবে ইলেকট্রিকের তারে বসে ডাকছে নাকি মৃত্তিকার বুকে, সেটা ঠাওর করতে পারছি না।
এককজোড়া টুনটুনির ডাকও কানে আসছে। খসখসে পাতার ছোট গাছটিতে আবারও বোধ হয় বাসা বেঁধেছে তারা। আরো কিছু পাখির ডাক শনাক্ত করছি, ঠিক এমন সময় পুকুরপাড়ের সামনের রাস্তাটায় একটি ট্রাক বিশ্রী শব্দ তুলে চলে গেল, এরপর আরো কিছু যান্ত্রিক শব্দে ছেদ পড়লো আমার অখণ্ড অভিনিবেশ।
বিরক্তির রেখায় কুঞ্চিত কপালকে উপেক্ষা করে আবারও মাতলাম মনোযোগের খেলায়। কিন্তু বিধিবাম!
এবার আম্মু এলো মনোযোগের তেরোটা বাজাতে। এসেই খানিকটা বকবক করে পায়ের দিকের জানালাটা খুলে পর্দা সরিয়ে দিল। কিছু বললাম না। ততক্ষণে আবারও ঘুঘুর ডাকে আমি আবারও মনোযোগ ফিরে পেয়েছি।
আঙিনার আম কিংবা পেয়ারা গাছে একজোড়া বুলবুলি হালকা স্বরে মধুর খুনসুটি করছে। এরই মাঝে দূর থেকে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুতান। হঠাৎই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আগমন, সুবহানাল্লাহ!
জানালা দিয়ে অনেকটা আলোই ঘরে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। পাশ ফিরতে চোখ আটকে গেল ঘড়ির কাঁটাতে। মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে গেল। বুঝলাম অবিলম্বে আমার সুখশয্যা বিসর্জন দিয়ে ছুটতে হবে শহর পানে। আজ যে ক্লাস আছে!
🙁 🙁
দিনলিপি-২
~মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া
২৯ বৈশাখ ১৪২৯