আলসেমি কিংবা সময় অপ্রতুলতায় সাধারণত রোজনামচা লেখা হয় না আমার। আজ খানিকটা শখ জাগলো, বিদায়লগ্নে দিবসটিকে কলমের ছোঁয়ায় সযত্নে তুলে রাখি স্মৃতির দেয়ালে। তারই প্রয়াসে আজ লিখতে বসা।
সন্ধ্যা পেরিয়ে এখন মধ্যরাত। কি নিস্তব্ধ চারিপাশ! কোনো কোলাহল নেই, নেই যান্ত্রিকতার নাদ। আছে শুধু ঝিঁঝিঁদের কলতান। কোনো অবকাশ নেই, তারস্বরে ডেকে যাচ্ছে অবিরাম। আমি বেশ মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শুনছি তাদের।
একটা ছন্দ আছে! তাল, লয় সব ঠিক রেখে তারা ডেকে যাচ্ছে। কোথায় যেন খানিকটা অন্ত্যমিল খুঁজে পাচ্ছি আমি।
কপাল কুঁচকে ভাবতে লাগলাম, এ কোন অপার্থিব সূরে তারা আবিষ্ট করে রেখেছে তামাম দুনিয়া?!
ভাবনার অনেকটা সময় পলপল করে অতিবাহিত হলো। আমি কেবল ভেবেই চললাম….
উঁহু! কিছুই যেন ঠাওর করতে পারছিলাম না।
আরো কিছু সময় পর, আচমকাই মনে পড়লো একটি বিশেষ আয়াত। যেখানে পেলাম আমার চিন্তার খোরাক, স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো আপনাআপনি, অবসান ঘটলো সমূদয় ভাবনার। এখন কেবল সত্যের মহিমায় উজ্জীবিত হবার পালা।
সেই বিশেষ আয়াতে আমার রব্বে কারীম কী বলেছেন শুনুন তবে-
تُسَبِّحُ لَہُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡہِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِہٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَہُوۡنَ تَسۡبِیۡحَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا ﴿۴۴﴾
সাত আসমান, যমীন এবং এ দু’য়ের মাঝখানে যা কিছু আছে তা সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে; সৃষ্টিলোকে কোনো একটি জিনিসও এমন নেই যা তাঁর নামে তাসবীহ পাঠ করেনা; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা অনুধাবন করতে পারোনা; অবশ্যই তিনি একান্ত সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।
[সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৪৪]
আমি নতুন করে উপলব্ধি করলাম, আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে আমি আয়েশী ভাব নিয়ে শুয়ে আছি নরম বিছানায়! আর ঝিঁঝিঁর মতো প্রাণীরা রাত জেগে রহমানের প্রশংসায় উজ্জীবিত, তাসবীহ পাঠে মাতোয়ারা হয়ে আছে রবের ইশকে।
আত্মোপলব্ধির এক পর্যায়ে জাগ্রত হলো বিবেকবোধ। খেয়াল হলো-
গুনাহের কালিমায় ঢাকা জং ধরা কলব এখনও প্রক্ষালিত হয়নি। চোখ থেকে বেরিয়ে আসেনি অনুতাপের অশ্রুজল।
আর কবে হবো আমি, রবের কৃতজ্ঞ বান্দাদের একজন?
|| দিনলিপি-০১ ||
~মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।
১৯.০৪.২২