খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজন-ইন্টার্ন চিকিৎসক মারামারি, সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। মৃত রোগীর স্বজনের অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের মৃতদেহ নিতে দেয়নি। উল্টো মৃত রোগীর দুই ছেলেকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, রোগীর স্বজনরা অসত্য অভিযোগ করছেন।
তারা চিকিৎসকদের মারধর, ভাঙচুর করেছে।আজ রবিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।রোগীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাতে নগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকর পাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা (৫৫) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বুকে ব্যাথা ও পায়খানা-প্রসাব না হওয়ায় রাতেই মেডিক্যাল হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেই অনুয়ায়ী চিকিৎসা শুরু হয়। তবে শনিবার রাতে রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাঁর ছেলেরা চিকিৎসা ডেকেও পাননি। রাত ৩টার দিকে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রোগীর ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে তাঁর মায়ের চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ তোলেন।
এনিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকরা পুলিশ ডেকে রোগীর অপর দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে তুলে দেন ও প্রয়াত পিয়ারুন্নেছার মৃতদেহ নিতে বাধা দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রোগীর স্বজনরা খালিশপুরে নতুন রাস্তামোড়ে আধাঘণ্টা অবরোধ করে।মৃত নারীর স্বামী মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মায়ের এমন মৃত্যুতে আমার ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান তারা কেন দেখতে আসলেন না। এ নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। আমি যখন জানতে পারি গিয়ে হাত-পা ধরে মাফ চাই। এ সময় একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমার গায়েও আঘাত করেন। তারা আমার অপর দুই ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেনকে পুলিশে দিয়ে দেন।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সৈকত ঘোষ বলেন, রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসক রোগীর কাছে থাকা অবস্থায় রোগী মারা যান। চিকিৎসকদের কোনো ত্রুটি ছিল না। রোগী মারা যাওয়ার পার রোগীর ছেলেরা চিকিৎসকের রুমের চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলেছেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পুলিশ হামলাকারীদের আটক করে নিয়ে যায়।হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, পুলিশ রোগীর দুই স্বজনকে আটকের পর তারা মৃতের লাশ ইচ্ছা করে নেয়নি। আমরা তাদের লাশ নিতে বারবার অনুরোধ করেছি। বিকাল ৪টার দিকে তারা লাশ গ্রহণ করেছে।
খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোমতাজুল হক বিকেলে বলেন, এ ধরণের ঘটনা দুঃখজনক। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে একটি সমাধান করেছি। মৃত নারীর আটক দুই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারা মৃতদেহ নিয়ে গেছেন।