কোভিড ১৯ ভাইরাস সর্বপ্রথম কেস ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ২০২০ সালের ১১ মার্চে WHO এই আউটব্রেক কে মহামারী বলে চিহ্নিত করে। প্রথম দিকে শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি থাকায় ধারণা করা হয়েছিল যে, কোভিড ১৯ বেশি ছড়ায় শীতকালে। যেমন- ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় ভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে তাই সক্রিয় হয় বেশি। বাতাস যতবেশি ড্রাইয়ার হবে ভাইরাসটিও তত বেশি সক্রিয় হবে এবং সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসকে আক্রান্ত করবে। তাই শীতকালকেই করোনা ভাইরাসের অনুকূল সময় বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
কিন্তু এখন পূর্বের সব ধারনাই যেন বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রীষ্মকালেই যেন বেশি সক্রিয় এই ভাইরাস। যখন অন্যান্য দেশে করোনা ভাইরাস মহামরীর দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে, তখন বাংলাদেশে চলছিল শীতকাল। আর তখনি করোনা ভাইরাস কেস উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছিল দেশে। শীতকালে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সেই ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে তখন বাংলাদেশে ডেইলি কেস ৬% কমে এসেছিল। গত বছর অক্টোবরে সংক্রমণের হার ছিল ১১.৪১%, তা বেড়ে নভেম্বরে মাসে হয় ১৩.০৮%। ডিসেম্বরে এই হার হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১০.২৭%, ডেইলি কেস ১৫৬৬টি করে। আর জানুয়ারী প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ এর নিচে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হত। জানুয়ারীতে ডেইলি রেট নেমে আসে ৫%-৩% পর্যন্ত । মানে যখন দেশে পুরোপুরি শীতকাল তখনি সবচেয়ে কম করোনা আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবছর শীতকাল আগেই এসেছে অন্যান্য বছরের তুলনায় কিন্তু কোন কোভিড ওয়েব হিট করে নি দেশে।
অথচ চলতি বছর গরমকালে মার্চ ও এপ্রিল মাসে এসে করোনা কেস উল্লেখযোগ্য হারে বাড়া শুরু করেছে। মার্চের শুরুতে টেস্টের পজিটিভিটি রেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.৬% যা পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে দেশে কোভিড ১৯ সিচুয়েশন ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এপ্রিলে এসে দেশের ইতিহাসের একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ১০১ জন প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। গত ৮/১০ দিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ দেখছে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কত দ্রুত বেড়ে চলেছে।গত ৭ দিনে মোট মৃত্যু ৫৯৪ জন ও ভাইরাসে মানুষ আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮,১৮৫ জন। এই রেকর্ড ব্রেকিং হার শুধু বেড়েই চলেছে, কোনো লক্ষণ নেই কমার। দেশজুড়ে তাই দেয়া হয়েছে কঠোর লকডাউন। শুধুমাত্র জুরুরী সেবা ছাড়া বাকি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন সবকিছু বন্ধ করা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর জায়গা হচ্ছে না, নেই পর্যাপ্ত আইসিউ। এত ভয়াবহ অবস্থা হবে তা এদেশের মানুষ ভাবতে পারে নি। করোনার নতুন স্ট্রেইন ও দেশে শনাক্ত হয়েছে। আর বর্তমানে তরুণ, স্বাস্থ্যবানরাই সিগনিফিকেন্ট নাম্বারে আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে বেশি।
এ-থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এদেশে গরম আবহাওয়াতেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে বেশি। ভাইরাসের প্রজাতির পরিবর্তন, ন নতুন স্ট্রেইন , আবহাওয়ার সাথে ভাইরাসের খাপ খেয়ে নেওয়া ইত্যাদি কারন এর সাথে জড়িত হতে পারে বলে গবেষকরা বলেছেন। টিকার শতভাগ কার্যকারিতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ টিকা নেয়ার পরও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কেস অহরহ। করোনা ভাইরাস থেকে তাই আদোও আমাদের রেহাই কবে তা এখনও রয়ে গেছে অজানা। এমতাবস্থায় আমাদের যা অবশ্য করণীয় তা হলো নিজ দায়িত্ববোধ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরিধান করা, সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, জন সমাগম এড়িয়ে চলা।