রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাকচাপায় এক ছাত্রের মৃত্যুর পর ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠেছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা হল ছেড়ে বের হয়ে এসেছেন। তারা বিভিন্ন স্থানে আগুন দিয়েছেন ও কয়েকটি ভবনে ভাংচুর চালিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
হবিবুর রহমান হলের সামনে ট্রাকচাপায় এক ছাত্র নিহত হওয়ার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। নিহত ওই ছাত্রের নাম মাহমুদ হাসান হিমেল। তিনি চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি নাটোর।
তার সহপাঠীরা জানান, হিমেল রাতে বাজার থেকে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে ফিরছিলেন। রাত ৯টার দিকে পাশ্ববর্তী কনস্ট্রাকশনের কাজে আসা বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকা একটি ট্রাক হিমেলকে চাপা দেয়। এতে তার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে হবিবুর রহমান হলের সামনে একটি বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিমেলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ছয় ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা নির্মাণাধীন ভবনেও ভাংচুর চালায়। এ সময় প্রক্টর লিয়াকত আলী ঘটনাস্থলে আসলে তাকে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। দু ঘণ্টা ওই অবস্থায় লাশ পড়ে থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে রাত ১১টার দিকে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমার সন্তানতুল্য ছাত্র মারা গেছে। আমি এটিকে অ্যাকসিডেন্ট বলব না, এটি হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। নিহত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আগামীকাল (বুধবার) আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করব।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হবিবুর রহমান হলের সামনে ২০তলা একাডেমিক ভবনের কাজ চলছে। ভবন নির্মাণের মালামাল আনা-নেয়া করতে প্রচুর ট্রাক ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছে। তবে এসব ট্রাকের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সড়কের অবস্থাও ছিল বেহাল। এ পথে ট্রাক না চালাতে আমরা বারবার অনুরোধ করলেও প্রশাসন কথা কানে নেয়নি।
হিমেল নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র ও ছাত্রীরা তাদের হল থেকে বেরিয়ে আসে। তারা বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করে। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।