কক্সবাজারের টেকনাফে সন্ত্রাসীরা আট জেলেকে অপহরণের পর জনপ্রতি তিন লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা পাহাড়ের ভেতর বনিরছড়া খাল থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
অপহরণের শিকার আট জেলে হলেন উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরার গ্রামের রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ (২৮), ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৩), তাঁর ভাই করিম উল্লাহ (৩৫), মমতাজ মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান (৪২), রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ (৩৩), কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক (৫৫), রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আবছার (২৭) ও নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৮)।
রিদুয়ানের বাবা মমতাজ মিয়া বলেন, রোববার বিকেলে পাহাড়ের খালে মাছ ধরতে গেলে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তাঁর ছেলেসহ আটজনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানার পর পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়। রাতে অপহরণকারীরা মুঠোফোনে কল করে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেন। এখন পর্যন্ত কারও কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন দিয়ে অভিযান চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপহরণের শিকার দুই ভাই মোস্তফা ও করিমের বড় ভাই হাবিব উল্লাহ বলেন, তাঁর দুই ভাই আরও কয়েকজন মিলে পাহাড়ের ছড়ার খালে মাছ ধরতে যান। এ সময় হঠাৎ পাহাড় থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নেমে এসে তাঁদের সবাইকে জিম্মি করে। পরে তাঁদের অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। মোস্তফার মুঠোফোন থেকে সকালে কল করে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ করে দাবি করে অপহরণকারীরা। এসব বিষয় প্রশাসনকে জানালে বিপদ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় সন্ত্রাসীরা।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো পরিবার তাঁদের কোনো অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় সহকারী পুলিশ সুপার সাকিল আহমদের নেতৃত্বে ড্রোন দিয়ে অভিযান চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল হালিম বলেন, আটজনকে একসঙ্গে অপহরণের ঘটনাটি সন্দেহজনক। এ ঘটনায় অন্য কোনো কিছু থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও তাঁদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
বাহারছড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দিন দিন এলাকাটি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। কাউকে একা পেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অপহরণ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন আতঙ্কে রয়েছে।
বাহারছড়ার ইউপি সদস্য হুমায়ূন কাদের চৌধুরী বলেন, এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। লোকজন ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।