আচ্ছা,দশ তলা থেকে ঝাঁপ দিতে কেমন লাগে?
নয় তলায় এসে কি মা-বাবার মুখ দুটো মনে পড়ে?
কিংবা আট তলায় এসে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে পার্কে বসে কাটানো একটা বিকেল…
মনে পড়ে?
স্কুলের বিস্কুট দৌঁড়ে প্রথম হয়ে সোনালী মেডেল পাওয়ার দৃশ্যটা হয়তো সাত তলায় এসে মনে পড়ে যায়…
আচ্ছা এসব না হয় বাদই দিলাম।
ক্রাশ “হাই” লিখে ম্যাসেজ দিয়েছে; তার রিপ্লাই টা তো দিয়ে আসা হলোনা- ছয় তলায় এসে মনে পড়ে কি?
পাঁচ তলায় এসে কক্সবাজার ট্যুরের কথাটা মনে পড়ে না? সামনের মাসেই তো বন্ধুদের সাথে যাওয়ার কথা।আর যাওয়া হবেনা।সবাই একসাথে বসে সূর্যাস্ত দেখা হবেনা।ঝিনুক কুড়ানো হবেনা।বালিতে লেখা হবেনা নিজের নামটা।
চার তলা উপস্থিত।হঠাৎ কি মনে পড়ে যে মা প্রিয় হাসের মাংস রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে আজ?সেটাও তো খেয়ে আসা হলোনা।মায়ের রান্না কিন্তু সেরা।আর কোনোদিন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হবেনা।
তিন তলায় এসে বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরতে যাওয়ার দিনগুলো মনে পড়ে হয়তো। ‘নিজের টাকায় আর বাবাকে ঘোরানো হলোনা’ ভেবে আক্ষেপ হয়না তখন?
দুই তলাও চলে আসে এরপরে।’পুরো দুনিয়ার কাছে ব্যর্থ হলেও প্রিয়জনেদের কাছে তো আমিই ছিলাম সেরা’ এই কথাটা মাথায় আসে তখন হয়তো।
এক তলায় এসে হয়তো বোঝা যায় যে ঝাঁপ দেয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল।
জীবনে তো ছোট ছোট কত সুখ আছে;মনে করে হাসবার মত কত মজার স্মৃতি আছে।অথচ দশ তলার উপরে দাঁড়িয়ে খারাপ স্মৃতিগুলোই মনে পড়েছে শুধু।নিজেকে মনে হয়েছে ব্যর্থ একটা মানুষ।
কিন্তু এখন?
বড্ড দেরী হয়ে গেছে..
বড্ড দেরী হয়ে গেছে..
তাই ভালো স্মৃতিগুলো মনে করার হলে ঐ দশ তলায় দাঁড়িয়েই মনে করা দরকার।এর পরে তা মনে করে আসলেই কোনো লাভ নেই।ঐ যে, বড্ড দেরী হয়ে যায়…
কলমে- দীপা সিকদার জ্যোতি