কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অধিক মনোযোগী ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে এই বার্তা পাওয়া গেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করতে দিল্লির আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেছেন তিনি। কূটনীতিক সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকালে এসব বিষয়ের প্রতি জোর দেবে ভারত।
জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফর শেষে শুক্রবার ভুটানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সকাল সাড়ে ৮টায় কুর্মিটোলা বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বিদায় জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় বিমানবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশ ও ভুটান সফরের অংশ হিসাবে তার এই আগমন। ঢাকায় নেমেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জুলাই নাগাদ ভারত সফরে যেতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। তারপর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন জয়শঙ্কর। রাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন ড. মোমেন।
বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের এবারের সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জয়শঙ্করের সফরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ভারতের একজন উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবে নাগাদ ভারত সফর করবেন সেটা তিনি নিজেই নির্ধারণ করবেন। তার সুবিধাজনক সময়ের অপেক্ষায় আমরা আছি।’
ভারতীয় ওই কূটনীতিক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের আগে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন (জেসিসি) বৈঠক হবে। সেখানে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেতৃত্ব দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে একটা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে জ্বালানি খাত, পানিবণ্টন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নসহ একটা বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতায় জোর দেওয়া হবে।’
বিশ্বব্যাপী বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি খাত, বাণিজ্য, কানেকটিভিটির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন ওই ভারতীয় কূটনীতিক। তিনি বলেন, ‘জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা হতে পারে। ভারত এ ক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে সহযোগিতায় রাজি।’ জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা কীভাবে হবে তার একটি গাইডলাইন ভারত এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অপর দিকে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সংকট গভীর হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের দেশগুলো নিজেরা মিলে কিছু করা যায় কিনা সেদিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন জয়শঙ্কর।’
ঢাকার কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে জেসিসি বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ হবে বলে জয়শঙ্কর আমাদের জানিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এটাও বলেছেন যে, এক বছর পর তিনি বাংলাদেশ সফর করলেন। ফলে আগে দুই দেশের মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।’
কূটনৈতিক সূত্র মতে, গোয়াহাটিতে মে মাসের শেষ নাগাদ এশীয় নদী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গোয়াহাটিতে সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
জয়শঙ্করের সফরকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পাদন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা পুনরায় চাওয়া হয়েছে। জয়শঙ্করের এবারের সফরকালে ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় মোহন কাটরা ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সংক্রান্ত ডেস্কের যুগ্ম সচিব স্মিতা প্যান্ট সফরসঙ্গী ছিলেন।