সিলেটের পর্যটন এলাকা জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর প্রশাসন নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের হামলার ঘটনায় আরও ৩জনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে আটক করা হলো।
আটক স্বেচ্ছাসেবকেরা হলেন সেলিম মিয়া (২১), লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস (২২), সুহেল রানা (২২), নাজিম উদ্দিন (২৩) ও জয়নাল আবেদীন (২৩)।
সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদের আটক করা হয়।
আগামী সাত দিন জাফলংয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে কোনো ধরনের প্রবেশ ফি আদায় করা হবে না বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী সাত দিন জাফলংয়ে প্রবেশ উন্মুক্ত থাকবে।
হামলার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদের দিনগুলোতে টিকিট বিক্রি ও ছবি তোলার নামে স্বেচ্ছাসেবক নামধারী কতিপয় যুবক পর্যটকদের সঙ্গে চাঁদাবাজি করছিলেন। একটি ছবি তুলে তারা পর্যটকদের জিম্মি করে এক হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা দাবি করেন।
এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে ওই পর্যটন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা কতিপয় যুবক পর্যটকদের ওপর বেপরোয়া হয়ে হামলা করেন। তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে পর্যটকদের পেটাতে থাকেন। এ সময় তরুণীরা তাদের সঙ্গীদের বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর, হেনস্তা করা হয়। স্থানীয়রা ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লেখা নীল ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন হাতে লাঠি নিয়ে পর্যটকদের পেটাচ্ছেন। এ সময় কয়েকজন নারী পর্যটক তাদেরকে থামাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, জাফলং সাব জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে নিয়োজিত দুই যুবককে আটক করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলার শিকার পর্যটকেরা ঢাকা থেকে সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন। এ সময় জাফলংয়ের ভ্রমণের টিকিট না কেটে জিরো পয়েন্টের দিকে নেমে যান। একপর্যায়ে টিকিট কাউন্টারে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরা ওই পর্যটকদের ডেকে নিলে এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পর্যটকদের ওপর হামলার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পর গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
মারধরে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব থাকা পাঁচজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমানের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পর্যটকদের ওই দলটি টিকেট ছাড়াই জাফলং এলাকায় ঢুকতে চাইলে টিকেট কাউন্টারের কাছে থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকরা পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক এবং এতে আমাদের পর্যটনের অনেক ক্ষতি হলো। যেহেতু হামলাকারীরা আমাদের নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক, তাই আমি দায় নিচ্ছি।
ইউএনও বলেন, ইতোমধ্যেই হামলায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবককে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. রতন শেখ বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটা টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। জাফলংয়ে পানিতে পড়ে একজন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন, এমন সংবাদে আমরা অন্যদিকে ব্যস্ত ছিলাম। ওই সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে আগামী সাত দিন জাফলংয়ে প্রবেশের ফি আদায় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে আগামী সাত দিন পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টিকিট বাবদ টাকা আদায় করা হবে না। জফলং উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে পর্যটকদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা এবং ঘটনার সঠিক তথ্য জানাতে ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।