বাবার হাত ধরে হাঁটছে ছোট্ট নাফিসা ও আফ্রিদ। প্রথমবার বইমেলায় যাচ্ছে তারা। শাহবাগ থেকে ভিড় ঠেলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে হাঁটতে একটু কষ্টই হচ্ছে শামীম আহমেদের। কিন্তু উপায় নেই। হাঁটতে কষ্ট হলেও মনের ভেতরে তার সুপ্ত আনন্দ। প্রথমবার ছেলেমেয়েকে বইমেলা দেখাবে, কিনে দেবে বই।
চলতি পথে হাঁটতে হাঁটতেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নাফিসা ও আফ্রিদের। তারা জানায়, খুব আনন্দ লাগছে। টিএসসি’র প্রবেশদ্বারে মেলার কাছাকাছি যেতেই ধাক্কাধাক্কি, আর বিড়ম্বনার শুরু। গেটের দু’ধারে জটলা করে বসে আছে কিছু হকার।
জানা গেল, নিরাপত্তারক্ষীদের কিছু টাকা ঘুষ দিয়ে একদম গেটের কাছের জায়গা দখল নিয়েছে হকারেরা। মেলার এমন অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শামীম। বললেন, গেটের সামনে হকারদের ভিড় থাকলে লোকজন ভেতরে যাবে কীভাবে?
ধাক্কাধাক্কি করে সোজা শিশুদের চত্বরে চলে গেলেন শামীম। সেখানে গিয়ে আরো মন খারাপ হলো তার। ছেলেমেয়েকে সিসিমপুরের ইকরি, টুকটুকিদের দেখাবে বলে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এসে দেখেন তারাও নেই মেলায়। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার শিশু প্রহর রাখা হয়নি।
তবে রঙ-বেরঙের বই দেখে আনন্দে কাটিয়েছে নাফিসা-আফ্রিদ।
শুক্রবার ছুটির দিনে অগণিত বইপ্রেমীদের ভিড় জমেছিল মেলা প্রাঙ্গণে। এদিন সকাল ১১টা থেকে মেলা শুরু হলেও মূলত বিকেল গড়ালে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় দেখা যায় জনতাল ঢল। আড্ডা, বই কেনা আর ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকেন বইপ্রেমীরা। কোনো কোনো স্টলে দেখা যায়, প্রিয় লেখকের সঙ্গে ছবি তোলায় ব্যস্ত ক্রেতারা।
অনলাইন বই বিপণনে যুক্ত মাহবুব সেতু বলেন, ‘এবারের মেলা তো প্রথম সপ্তাহেই জমে ওঠেছে। ক্রেতারা বই কিনছেন। প্রথম দিন থেকেই নতুন বইয়ে মুখর হয়ে ওঠেছে মেলা।’
প্রতিবার মেলায় ছুটির দিনগুলো থাকে শিশুদের জন্য নির্ধারিত। সকাল বেলা থাকে শিশু প্রহর। সকাল থেকে বইমেলা মুখরিত থাকে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিতে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন না থাকলেও শিশু-কিশোরদের ভিড় দেখা যায়।
ঢাকার মিরপুর থেকে বইমেলায় এসেছে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখার চাপ নেই। এ জন্য পছন্দের বই কিনতে এসেছে। সুমাইয়া জানায়, সেবা প্রকাশনী থেকে গোয়েন্দা সিরিজের বই কিনেছে। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মেলার চতুর্থ দিনে নতুন বই এসেছে ১৭৭টি।
প্রকাশিত নতুন বইয়ের মধ্যে পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে মোস্তফা মামুনের কিশোর ভৌতিক ‘আনিস সাহেবের আয়না’, পাঠচিত্র এনেছে সাইফ সুমনের নাটকের বই ‘উপন্যাস থেকে নাটক’, চৈতন্য এনেছে শাহনাজ মুন্নীর ‘নির্বাচিত গল্প’, আদর্শ এনেছে মাহবুব মোর্শেদের ‘অপ্রকাশিত জীবনানন্দ’, বাংলা একাডেমি এনেছে জালাল ফিরোজের ‘অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস’, থকবিরিম এনেছে গারো নারী ফুটবলার মারিয়া মান্দার জীবনিভিত্তিক বই।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বজিত সাহা। আলোচক ছিলেন ইকবাল হাসান, তাজুল ইমাম ও ইউসুফ রেজা। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে।
পরে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহীদ রেজা নূর ও শহীদ ইকবাল। আলোচক ছিলেন আমিনুর রহমান সুলতান ও প্রশান্ত মৃধা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী।
এ ছাড়া ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আসলাম সানী ও সাধনা আহমেদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, হারিসুল হক, ওবায়েদ আকাশ ও রনজু রাইম।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, বেলায়েত হোসেন ও রেজিনা ওয়ালী।
জাহান বশিরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিশ্বভরা প্রাণ’র শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়।
শনিবার পঞ্চম দিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৩টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : উন্নয়নের নারী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফওজিয়া মোসলেন ও তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাছিমা বেগম।