শিশুর জ্বর হলে তা মা-বাবার জন্যও সমান কষ্টের। শিশুর মাথার কাছে বসে ভয় এবং উদ্বিগ্নতায় কাটে মা-বাবার সময়। জ্বর কোনো অস্বাভাবিক অসুখ নয়, এটি হতে পারে অন্য কোনো অসুখের সতর্কবার্তা। তাই শিশুর জ্বর হলে ঘাবড়ে না গিয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হবে। মা-বাবা কিংবা অভিভাবককে উদ্বিগ্ন দেখলে শিশু আরও বেশি ভয় পেয়ে যেতে পারে। তাই তার সামনে কান্নাকাটি করা বা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।
জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ :
শিশুর শরীর যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম হয়ে যায়, তার চোখ-মুখ লাল হয়ে যায় এবং শিশু যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘামতে থাকে তবে সতর্ক হোন। এসবই হলো শিশুর জ্বর আসার প্রাথমিক লক্ষণ। এসময় শিশুর বারবার তৃষ্ণা লাগতে পারে। জ্বর হলেও অনেক সময় শিশু সেটি অনুভব করতে পারে না। সেক্ষেত্রে লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝবেন শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এসময় শিশুর কানের ব্যথা, গলা ব্যথা, ফুসকুড়ি বা পেটে ব্যথা ইত্যাদিও হতে পারে।
যা করবেন :
শিশু যে ঘরে থাকে চেষ্টা করুন সেটি ঠান্ডা রাখতে। অনেকে দরজা-জানালা আটকে শিশুকে কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে রাখেন। এটি একেবারেই ঠিক নয়। এতে শিশুর জ্বর ও অস্বস্তি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই শিশুর জ্বর হলে তাকে খোলামেলা কক্ষে রাখুন। কক্ষে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
শিশুকে মোটা মোটা পোশাক পরিয়ে রাখবেন না। তাকে যতটা সম্ভব হালকা পোশাক পরিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে জামা খুলে খোলা বাতাসে রাখুন। এতে জ্বর দ্রুত কমবে। শিশুকে পোশাক পরালে সেটি যেন সুতির ও হালকা রঙের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
জ্বর এলে শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখা জরুরি। কোনোভাবেই যেন শরীরে পানিশূন্যতা দেখা না দেয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। শিশুকে বারবার তরল খাবার খেতে দিন। শুধু পানি খেতে না চাইলে ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি খেতে দিন।
শিশুরা চঞ্চল হয়। তাই অসুস্থ হলেও তারা বিশ্রাম করতে বা শুয়ে-বসে থাকতে চায় না। অনেক সময় দেখা যায় অসুস্থতা নিয়েই তারা দৌড়ঝাঁপ করে। এতে আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ার ভয় থাকে। তাই শিশুর জ্বর এলে তাকে বিশ্রাম করতে দিন।
যা করবেন না :
অনেকে জ্বর কমাতে স্পঞ্জিং করেন। শিশুর জ্বর হলে তার জ্বর কমাতে স্পঞ্জিং ব্যবহার করবেন না। ঠান্ডা পানিতে শিশুর কাঁপুনি বাড়তে পারে এবং সেইসঙ্গে বেড়ে যেতে পারে তার শরীরের তাপমাত্রাও।
জ্বর হলে শিশুর শরীরে কখনোই অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করবেন না। অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করলে সেটি ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে কোমার মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে কোনো ধরনের ওষুধ দেবেন না। কারণ সেটি পরবর্তীতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ঘরোয়া প্রচেষ্টায় যদি শিশুর জ্বর না কমে তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।