সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে চিকিৎসা দেয়ার নামে ফার্মেসির ভেতর ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জোসনাকে তিন বন্ধু মিলে প্রথমে ধর্ষণ পরে ঘটনা চাপা দিতে ৬ টুকরো করে হত্যা করা হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ওই ফার্মেসি থেকে জোসনার ছয় টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানাল সিআইডি।
শনিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, তার বন্ধু অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত চন্দ্র গোপকে।
গ্রেপ্তার জিতেশ চন্দ্র গোপ এবং অনজিৎ চন্দ্র গোপ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার শহিলা গ্রামের বাসিন্দা আর অসীত চন্দ্র গোপ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর অলিপুর গ্রামের।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকার ব্যারিস্টার আবদুল মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের একটি ফার্মেসি থেকে শাহনাজ পারভীন জোসনার ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জোসনা জগন্নাথপুর থানার নারকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী।
এ ঘটনায় ওই দিনই নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সিআইডি জানায়, জোসনা ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরে নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানান, ওষুধপত্র কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সঙ্গে জোসনার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোসনা কিছুদিন ধরে গোপন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোসনার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যান। তখন জোসনা তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে তিনি তাকে দোকানে যেতে বলেন। ওই দিন বিকেলে জোসনা জিতেশের দোকানে গেলে তাকে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
মুক্তাধর আরও জানান, অনেক রাত হলে বাসায় যাওয়ার জন্য জোসনার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ। এতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জোসনা। তখন জিতেশ, তার দুই বন্ধু অনজিৎ এবং অসীত গোপ তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। জিতেশ তার ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে জোসনাকে বসিয়ে রাখেন। সেখানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাকে ঘরে রেখে ফার্মেসির তালা বন্ধ করে বাইরে চলে যান জিতেশ।
এরপর রাত গভীর হলে আশপাশের দোকান যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন জিতেশ ও তার দুই বন্ধু ফার্মেসি খুলে এনার্জি ড্রিংকস পান করে ধর্ষণ করেন।
বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারকে জানিয়ে দেবেন বললে জিতেশ ও তার বন্ধুরা তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে লাশটি দুই হাত, দুই পা এবং বুক পেটসহ ছয়টি টুকরা করেন। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মেসিতে তালা লাগিয়ে চলে যান। পরে খণ্ডিত লাশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, ‘এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অনজিৎ এবং অসীত গোপকে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সিআইডির বিশেষ সহকারী পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহজাহান খান।