গত ২৬ জুন দেশে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু ১৪ হাজার ছাড়িয়েছিল । তবে এরপর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত পেরিয়েছে মাত্র ২৮ দিন । ৫ হাজার মানুষ এই ২৮ দিনে করোনায় মারা গেছেন আরও । প্রায় ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে এ সময় দৈনিক গড়ে । সেই তালিকায় বর্তমানে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বে যেসব দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে । এমনটা মনে করছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শঙ্কার বিষয়, শিগগিরই করোনার এই মৃত্যুর মিছিলে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাবে । পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে তাঁদের শঙ্কা সংক্রমণ । তাঁরা আর বলছেন, এখনো সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ থাকছে বলে তারা জানায় ।
হাটে লোকসমাগমের প্রভাব আরও দুই সপ্তাহ পর সংক্রমণে দেখা যাবে ঈদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম করোনায় মৃত্যু বেশি হওয়ার তিনটি কারণ রয়েছে বলে জানান করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যারা । তিনি রংপুর ডেইলীকে বলেন, সংক্রমণ শনাক্ত বেশি হলে মৃত্যু বেশি হবে বলে জানান । তা যদি বেশি ক্ষতিকারক হয় তাহলে মৃত্যু বেশি হবে, যে ভেরিয়েন্ট দেশে বেশি কার্যকর । তাহলে মৃত্যু বেশি হবে আর চিকিৎসাব্যবস্থা যদি ঠিক না হয় । নজরুল ইসলাম বলেন, তিনটি কারণেরই উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে দেশে করোনায় মৃত্যু বাড়ার ।
স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়াদি (মেডিকেল কমপোনেন্ট) থাকছে না বর্তমানে যে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে তাতে । খুব একটা কাজ হবে না ,এমন ‘নন–মেডিকেল লকডাউন’ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে । প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকার গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে । তবে গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন মানুষের করোনায় মৃত্যু হচ্ছে । ৯৪ দিন দেশে প্রথম ১ হাজার মৃত্যুতে সময় লাগে । মৃত্যু ১৪ হাজারে পৌঁছায় গত ২৬ জুন করোনায় । ১৫ দিন মৃত্যু ১৩ থেকে ১৪ হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ।
গত ৪ জুলাই করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছিল । তবে মৃত্যু ১৪ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৮ দিন। ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করলে । তবে এরই মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে । ৭ জুলাই প্রথম দৈনিক মৃত্যু ২০০ ছাড়ায় দেশে করোনার ডেলটা ধরনের (ভারতীয় ধরন) দাপটের মধ্যে । তবে ৯ জুলাই মোট মৃত্যু ১৬ হাজার ছাড়ায়। মাত্র ৫ দিন ১৫ থেকে ১৬ হাজার মৃত্যুতে সময় লাগে । এটি ছিল দ্রুততম সময়ে এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ড দেশে চলমান করোনা মহামারিকালে।
তা বোঝা যায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মতো পদক্ষেপের প্রভাব কতটুকু । কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি সংক্রমণচিত্রে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের । ঈদুল আজহা সামনে রেখে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার এমন পরিস্থিতির মধ্যেই । সে বিষয়ে তখনই সতর্ক করেছিল করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সংক্রমণের ওই পরিস্থিতিতে লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত যে ভয়াবহ হতে পারে। দিন মৃত্যু ছিল ২০০-এর ওপরে গত ৭ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত অধিকাংশ । তবে গত ১৯ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর আসে ।
করোনায় মৃত্যু ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে আজ শনিবার দেশে । তবে দেশে করোনায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার, ১৭ থেকে ১৮ হাজার এবং ১৮ থেকে ১৯ প্রতিটি এক হাজার মৃত্যু হয়েছে ৫ দিনের ব্যবধানে । মানুষের মৃত্যু হয়েছে শেষ ১৫ দিনে ৩ হাজারের বেশি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সেই তালিকায় বর্তমানে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে বিশ্বে যেসব দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হচ্ছে