চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
কলিজা পোড়া ঘ্রাণে আজ ধরণী মাতোয়ারা,
জ্যোৎস্নার শুভ্রতায় কালো মেঘের আগমনে শশীর অভিমান,
ওপাশের বাড়িতে অবহেলায় পড়ে থাকে বৃদ্ধা বেচারি।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
রাতাজাগা চাতক পাখির বিরহী সুরে রাত্রি ভার,
প্রেমময় দাম্পত্য জীবনে এসেছে শিথিলতা,
সন্তানহারা মায়ের অশ্রু ভেজা আঁচলে কতশত হাহাকার।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত বাবা, ছেলেমেয়ের বায়না পূরণে অক্ষম মা,
নিয়তির যাতাকলে পিষ্ট হয়ে সংসারে অশান্তি।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
সাতাশ পেরিয়ে যাওয়া যুবতী মেয়েটা প্রতিনিয়ত গলাধঃকরণ করে পড়শিদের খোঁটা,
মধ্যবিত্তের বোঝার ভারে নূহ্য পরিবারের সদস্য,
বাতাসে ভেসে আসে ধর্ষিতা মেয়ের আর্তচিৎকার।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
সুদের টাকার প্রভাবে হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছেলেটা আজ বখাটে,
পাড়ার দোকানে সান্ধ্য আলাপে চলে পরচর্চা,
সমাজবিজ্ঞানের দূরন্ত ছেলেটা গোপনে রিক্সা চালিয়ে রাত করে হলে ফেরে।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
বুকে আগলিয়ে রাখা মানিক মাকে রেখে যায় বৃদ্ধাশ্রমে,
হসপিটালের বেডে মৃত্যুর প্রহর গোণে ক্যান্সারে আক্রান্ত ষোড়শী মেয়েটা,
বহুকষ্টে জন্ম দেয়া সন্তানের মুখ না দেখেই মারা যায় গর্ভধারিণী।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
চামড়ার রঙে বেচাকেনা হয় দুই জোড়া হাত,
সমাজের চোখ রাঙানি সয়ে যায় ভির্ভোসি নারী,
সবাইকে হাসানো ছেলেটা দিনশেষে বালিশে মুখ চেপে কান্না আটকায়।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
অট্টালিকায় শুয়েও ঘুমের নাগাল পায় না সহস্র চোখ,
গয়না ভর্তি শরীর নিয়েও কতদিন মন খুলে হাসে না শহুরে রমণী,
বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে বাইক এক্সিডেন্টে হারিয়েছে প্রাণ।
চারদিকে এত কষ্ট কেন বলতে পার?
ছেলের অসিফের সামনে গামছা বিছিয়ে ভিক্ষা করে বাবা,
বিধবা বোনটার খবর নেয় না একসাথে বড় হওয়া প্রাণের সহোদর,
ডাস্টবিনে পাওয়া যায় পাষাণ বাবা-মায়ের মৃত জান্নাতিফুল।
পার কি বলতে, চারদিকে এত কষ্ট কেন?
কষ্টের কথা! কষ্টের শব্দ! কষ্টের সুর! কষ্টের সমীরণ! কষ্টের জল! কষ্টের আখ্যান!
চারদিকে কেন এত কষ্ট?
কেন? কেন? কেন?
||চারদিকে এত কষ্ট কেন?||
✍️মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া