দেশে তিতাসসহ ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি খুচরা পর্যায় সকল ধরনের গ্রাহকের কাছে অভিন্ন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যে আবাসিকের দুই চলায় ৯৫০ থেকে ২১০০ টাকা ও এক চুলার ক্ষেত্রে ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অস্বাভাবিক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে নিশ্চিতভাবেই বাড়বে বিদ্যুতের দাম।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিইআরসির কারিগরি কমিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম ২৫ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৪ টাকা ৪৫ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারিগরি কমিটি তা বাড়িয়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা করার সুপারিশ করেছে। প্রতি ঘনমিটারে বাড়বে ৮৯ পয়সা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে, আর সেই ব্যয় সমন্বয় করতে বাড়ানো হবে বিদ্যুতের দাম।
শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শুনানিতে তিতাস ও বাখরাবাদের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
পেট্রোবাংলার পাইকারি গ্যাসের দাম ও জিটিসিএলের সঞ্চালন মাশুল নির্ধারণের পর দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাস বিক্রি করায় একটা মার্জিন দেয়া হবে, সেই মার্জিন ধরেই গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। সে কারণে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান অভিন্ন দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
বুধবার দেশের সব থেকে বড় ঢাকা সহ ১৬ জেলার গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও চাদপুর, কুমিল্লা, ফেনি, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চল নিয়ে গঠিত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দেয়া মার্জিন বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। এতে তিতাস প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ৬৮ পয়সা নতুন মার্জিন নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। আর কারিগরি কমিটি বলছে, বিতরণ মার্জিন ছাড়াও তিতাসের আরও আয় রয়েছে। গত বছর তিতাস ১০০ কোটি টাকার ওপর আয় করেছে। তিতাসের মার্জিন বিলোপ করার সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
ইতিমধ্যে বিইআরসি পেট্রোবাংলার পাইকারি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করেছে। জিটিসিএলের সঞ্চালন মাশুলের ওপরও গণশুনানি করেছে। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে, পেট্রোবাংলার প্রতি ঘন মিটার পাইকারি গ্যাসে ৩ টাকা ১১ পয়সা বাড়ানো যেতে পারে। এতে প্রতি ঘন মিটার পাইকারি গ্যাসের দাম হবে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। আর জিটিসিএলের সঞ্চালন মাশুল শূন্য দশমিক ছয় ভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
এর আগে গত মঙ্গলবার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মার্জিন বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি হয়। সেখানেও মার্জিন বিলোপের সুপারিশ করেছে বিইআরসির কারিগরি কমিটি।
বৃহস্পতিবার গণশুনানির শেষ দিন। এ দিন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী ও সিলেটে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মার্জিন বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। এর মধ্য দিয়ে গত ২১ মার্চ শুরু হওয়া গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর বিইআরসির গণশুনানি শেষ হবে। গণশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আদেশ দিতে হবে বিইআরসিকে। দাম বাড়ুক অথবা অপরিবর্তিত থাকুক তা এই ৯০ দিনের মধ্যে বিইআরসিকে জানাতে হবে।