বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেছেন, সরকারি তথ্য বলছে ঢাকার গুলশানে দারিদ্র্যের হার ৪ শতাংশ আর দেশের সবচেয়ে গরিব এলাকায় দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ। দেশ শাসন করা শাসকদের চোখ গুলশানের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫১ বছরের বাংলাদেশে এটা মানা যায় না। এজন্য সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষা করতে গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে ফেরাতে হবে।
শুক্রবার পটুয়াখালী কলেজ রোডে সিপিবির অস্থায়ী কার্যালয়ে পার্টির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় বক্তব্যে রুহিন হোসেন একথা বলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান এক দেশ থাকলেও ছিল দুই অর্থনীতি। এখনো এক বাংলাদেশে দুই অর্থনীতি চলছে। আগে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পাচার হত পশ্চিম পাকিস্তানে, এখন পাচার হয় ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাস্ট্রায়ত্ত সম্পদ লুট করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নেই।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে গ্রাম শহর ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার কথা থাকলেও হচ্ছে না। অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ ও সম্পদের সুষম বন্টনের কথা থাকলেও বৈষম্য বেড়ে চলেছে। চলতি ব্যবস্থাই এই সংকট তৈরি করেছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও অর্থনীতির হাতে দেশ আজ বন্দি। এর থেকে মুক্তি পেতে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, বিজয়ী হতে হবে। গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে ফেরাতে হবে। এটা করতে পারবে বামপন্থীরা।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যার্থতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষের চাহিদা মতো খাবার সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। সব কিছুর দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কম খেয়ে পুস্টিহীনতায় ভুগছে।
সারা দেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যয্যমূল্যের দোকান চালু, ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কম দামে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিত্যপণ্য সরবরাহের দাবি জানান রুহিন হোসেন। অযৌক্তিক দ্রব্যমূ্ল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে, মজুদদারি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাটের টাকা জোগান দিতে নতুন নতুন লুটপাটের পথ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় মানুষের সম্মতি ছাড়া কোনো প্রকল্প না নেওয়া এবং সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণে স্বস্তি প্রকাশ করে রুহিন হোসেন বলেন, এর সুফল যেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ পায় তার জন্য এলাকায় কৃষি উন্নয়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে উপকূলীয় মানুষের জীবন মান উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে, এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
সিপিবির ঝালকাঠি জেলা সভাপতি স্বপন সেন গুপ্তের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে দলের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক, পটুয়াখালী জেলা সভাপতি মোতালেব মোল্লা, বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।