রাজধানীর বাজারভেদে নিত্যপণ্যের দামের পার্থক্য রয়েছে। আর গলির মুদিদোকানে পণ্যের দাম আরও বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার চারটি এলাকার বাজার ও মুদিদোকান ঘুরে দেখা গেছে, গলির দোকানে পণ্যের দাম বাজারের তুলনায় ৩ থেকে ১০ টাকা বেশি।ছোট বাজার ও পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন মূলত সীমিত আয়ের মানুষ। তাঁরাই এসব দোকান থেকে অল্প পরিমাণে পণ্য কেনেন। বেশি পরিমাণে পণ্য কিনলে দর–কষাকষির যে সুযোগ থাকে, অল্প পণ্যের ক্ষেত্রে তা থাকে না। ফলে দ্রব্যমূল্যের চাপ বেশি পড়ে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর।
দোকান ছোট। জিনিসপত্র পরিবহন করতে হয় ভ্যান অথবা রিকশায়। বিভিন্ন পণ্যের প্রতি ৫০ কেজির বস্তার পেছনে বাজারের তুলনায় ৩৫ টাকা বেশি খরচ পড়ে।মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকার ছোট মুদিদোকান মোহাম্মদিয়া জেনারেল স্টোর। দোকানে প্রতি কেজি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১৩০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা, চিনি (খোলা) ৭৮ টাকা এবং এক ডজন মুরগির ডিম ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
টাউন হল থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজার। এই বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরে প্রতি কেজি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১২২ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, চিনি (খোলা) ৭২ টাকা এবং এক ডজন মুরগির ডিমের দাম ১০৫ টাকা।দামের তারতম্যের কারণ সম্পর্কে মোহাম্মদিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক বাচ্চু মিয়া বলেন, দোকান ছোট। জিনিসপত্র পরিবহন করতে হয় ভ্যান অথবা রিকশায়। বিভিন্ন পণ্যের প্রতি ৫০ কেজির বস্তার পেছনে বাজারের তুলনায় ৩৫ টাকা বেশি খরচ পড়ে।
মোহাম্মদপুর ছাড়া গতকাল রায়েরবাজার, কল্যাণপুর ও খিলগাঁও এলাকার গলির মুদিদোকান ও বাজার ঘুরে পণ্যের দামের প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।রায়েরবাজার সিটি করপোরেশন মার্কেটের মেসার্স সিদ্দিক স্টোরসে প্রতি কেজি মসুর ডাল (চিকন দানা) ১২৫ টাকা, খোলা আটা ৩৪ টাকা, ময়দা ৫০ টাকা এবং পাম তেল ১৪৫ টাকা। ডিমের ডজন ১০৫ টাকা।
এই বাজার থেকে একটু দূরে পুলপারের জাফরাবাদ গলির আল-আমিন স্টোরে একই ডাল ১৩০ টাকা, খোলা আটা ৩৮ টাকা, ময়দা ৩৫ টাকা এবং পাম তেলের কেজি ১৫০ টাকা। ডিমের ডজন ১১০ টাকা।বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে আল-আমিন স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে ক্রেতারা বেশি পরিমাণে পণ্য কেনে। এলাকার ভেতরে এক পোয়াও (২৫০ গ্রাম) বিক্রি করতে হয়। পরিমাণে কম বিক্রি করায় পণ্য অনেক দিন মজুত রাখা লাগে। তখন কিছু পণ্য নষ্ট হয়। সবকিছু মিলিয়ে দাম একটু বেশি পড়ে।
রায়েরবাজার সিটি করপোরেশন বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এর কাছাকাছি দূরত্বে জিগাতলার শেরেবাংলা রোডে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা কেজি। বাজারের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দাম রাখা প্রসঙ্গে দোকানের মালিক কামাল হোসেন বলেন, ‘মুরগির পাইকারি দাম প্রতি কেজি ১৬০ টাকার মতো। পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এই লাভ না রাখলে কীভাবে হবে।’
মসুর ডালটি মাঝারি আকারের দানার। তাই অন্য দোকানের তুলনায় দাম একটু বেশি। আর পেঁয়াজ আগের কেনা, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে
কাউসার পাটোয়ারি , হামিম এন্টারপ্রাইজের দোকানি
মসুর ডাল ও পেঁয়াজে ১০ টাকা বেশি
কল্যাণপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া এলাকার মুদিদোকান হামিম এন্টারপ্রাইজে মোটা দানার মসুর ডাল কেজি ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কল্যাণপুর নতুন বাজারের কামাল স্টোরে একই ডাল ১০০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
হামিম এন্টারপ্রাইজের দোকানি কাউসার পাটোয়ারি বলেন, মসুর ডালটি মাঝারি আকারের দানার। তাই অন্য দোকানের তুলনায় দাম একটু বেশি। আর পেঁয়াজ আগের কেনা, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ে ডিমের ডজন ১১৫ টাকা
খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ চারতলা গলির মুদিদোকান মা জেনারেল স্টোরে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১১৫ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬০ টাকা এবং পাম সুপার ১৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে খিলগাঁও রেলগেট বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১০৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৫৪ টাকা ও পাম সুপার ১৩৫ টাকা লিটারে বিক্রি হয়।