গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী,গর্ভাবস্থা প্রতিটি মহিলার জীবনের একটি সুন্দর সময়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সতর্কতা একটি সুস্থ নবজাতকের জন্ম দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের সতর্কতা আপনাকে দারুণ ফল দিতে পারে। গর্ভাবস্থার মাধ্যমে আপনি মাতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই একজন মা হিসাবে আপনার আনন্দের সেই চূড়ান্ত মুহূর্তটি না আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য আপনার অনেক কিছু করতে হবে।
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলির মধ্যে একটি। এই প্রথম তিন মাসে অনেক কিছু ঘটে। তাই এ সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি।
আপনি মা হতে চলেছেন শুনে আপনি কিছুটা উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন। এটি আপনার প্রথম সন্তান হলে আপনি অনেক বিষয়েই অজ্ঞ থাকবেন। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের সতর্কতা সম্পর্কে আজ আমরা আপনাদের জানাবো।
ফলে গর্ভাবস্থার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনি কী করতে হবে তা জানতে পারবেন। কি করা যায় না? আপনাকে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত এবং আপনার কি এড়ানো উচিত? গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি ঘটে? গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, আমরা আপনার প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য এই তালিকা তৈরি করেছি। যাতে আপনি গর্ভাবস্থার এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি ঘটে
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি ঘটে, আরেকটা প্রাণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে আপনার শরীরের ভেতরে! কি একটি মনোরম অনুভূতি,তাই না? প্রথমে কিছুই অনুভব করা যায় না,তারপর আপনার মনোভাব পরিবর্তন হয়। তারপর মর্নিং সিকনেস। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী,বাচ্চা পেটের ভিতরে নড়াচড়া শুরু করে।
প্রথম তিন মাসে ভ্রূণের বৃদ্ধি
American College of Obstetricians and Gynecologists (ACOG) এর মতে, গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে শিশুর হৃদপিন্ড ও ফুসফুস তৈরি হতে শুরু করে। এই সময়েই শিশুর হাত,পা,মস্তিষ্ক,মেরুদণ্ড এবং স্নায়ু তৈরি হতে শুরু করে।
ভ্রূণের আকার তখন মটর দানার মতো হয়ে থাকে। দ্বিতীয় মাসে,ভ্রূণ আকারে বৃদ্ধি পায় এবং একটি শিমের বীজের মতো হয়। গোড়ালি, কব্জি,আঙ্গুল এবং চোখের পাতা গঠিত হয়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, হাড় প্রকাশের সাথে সাথে যৌনাঙ্গ এবং ভিতরের কানও বিকশিত হতে শুরু করে।
দ্বিতীয় মাসের শেষে,ভ্রূণের ৮-১০ টি প্রধান অংশ গঠিত হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভপাত ঘটে এবং ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় কোনো ক্ষতিকর ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে হাড় এবং পেশী বৃদ্ধি শুরু হয়। ভবিষ্যতের দাঁতগুলির ভিত্তি তৈরি হয় এবং আঙ্গুল এবং পায়ের আঙ্গুলগুলি বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে,অন্ত্রগুলি তৈরি হতে শুরু করে এবং ভ্রূণের ত্বক প্রায় স্বচ্ছ হয়।
প্রথম তিন মাসে মায়ের দেহে পরিবর্তন সমূহ
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে একজন মহিলার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। হরমোনের পরিবর্তন শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে। যদিও পরিবর্তনগুলি বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায় না,তবে সেগুলি শরীরের অভ্যন্তরে ঘটে।
গর্ভাবস্থার হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, কিছু লোক বিভিন্ন জিনিসের গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বিকাশ করে। এছাড়াও যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো খুব দুর্বল বোধ করা,স্তন কোমল হওয়া এবং আকারে বড় হওয়া,পেট খারাপ হওয়া,ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত ক্ষুধা,মেজাজের পরিবর্তন,কোষ্ঠকাঠিন্য,অম্বল,ঘন ঘন প্রস্রাব,মাথাব্যথা ইত্যাদি অনুভব হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যা খাবেন
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস যা খাবেন, গর্ভধারণের পরপরই,নিজের এবং অনাগত শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। এই বিশেষ যত্নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল খাদ্যাভ্যাস। গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্য অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু প্রতিটি মানুষের শরীরের ধরন আলাদা। তাই গর্ভাবস্থার পর ডায়েট সম্পর্কে আপনার নিয়মিত ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা প্রয়োজন। এই পুষ্টিগুলি আপনার ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে, শরীর মায়ের হাড় থেকে শিশুর শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেবে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, তাই এই সময়ে মায়ের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে।
যেমন দুধ, দই, পনির, ব্রকলি, বাঁধাকপি, মূলা, হাড়ের মাছ, তোফু, পালং শাক, ডুমুর, চিয়া বীজ, ডিম, তিল, বাদাম ইত্যাদি ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ১০-১৫মিনিটের জন্য আপনার শরীরে রোদ লাগান। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
আয়রন
আয়রন, আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি খুবই সাধারণ। আয়রনের ঘাটতি থাকলে গর্ভে থাকা শিশুর শরীরে কম অক্সিজেন পৌঁছায়।গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং অকাল জন্মের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন,উদ্ভিজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন গ্রহণ করা প্রাণীর উৎস থেকে বেশি ভালো।
ফলিক এসিড
ফলিক এসিড, গর্ভাবস্থার প্রথম ১৩ সপ্তাহে ফলিক অ্যাসিড বা ফোলেট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক এসিড হল এক প্রকার বি ভিটামিন। প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি থাকে এবং সঠিক পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যায়। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, তাই এই সময়ে আপনাকে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে এবং একটি পরিপূরক হিসাবে সঠিক পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করতে হবে ।
ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যেমন আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া বীজ, সেন্টিপিড, কমলা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়ায়। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন লেবু, কমলালেবু, আমলকি, আঙুর, আপেল ইত্যাদি খেতে হবে।
জিংক
জিংক শরীরের কোষ গঠনের জন্য অপরিহার্য। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক প্রয়োজন। তাই এ সময় চিকিৎসক আপনাকে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।
এছাড়াও, আপনার খাদ্যতালিকায় জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, ছোলা, ডিম, বাদাম, কাজু, চিনাবাদাম, মটরশুটি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, দুধ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস সময়ে মায়ের প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি খান।
আঁশ জাতীয় খাবার
আঁশ জাতীয় খাবার, গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কমন ব্যাপার। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, তাই এই সমস্যা কমাতে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি, শাক-সবজি ইত্যাদি খাবেন। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড খাওয়া শিশুর দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং ভাষা খুব ভালোভাবে বিকাশে সাহায্য করে। তাই এই সময়ে ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা ভালো। এছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে ভিটামিন এ, ডি এবং সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস কী খাবেন না
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাস কী খাবেন না, গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে কী খাবেন তা জানার পাশাপাশি কী খাবেন না তাও জানা জরুরি।
* গর্ভাবস্থার এই সময়ে ক্যাফেইনযুক্ত খাবার যেমন চা বা কফি খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
* এ সময় সামুদ্রিক মাছ কম খাবেন এবং মিঠা পানির মাছ খান কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় তা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
* আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ডিম এবং মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই ভালোভাবে রান্না করা প্রাণীজ প্রোটিন খান। পোচ করা ডিম, হাফ সেদ্ধ ডিম বা হাফ সেদ্ধ মাছ, মাংস একেবারেই খাবেন না। আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
* বাজার থেকে যেসব সবজি কিনে আনবেন তা কমপক্ষে ২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর রান্নার জন্য তৈরী করুন। কেননা,বর্তমানে সবজি সমূহ অতি মাত্রায় বিষ প্রয়োগে উৎপন্ন করা হয়।
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস সুস্থ থাকার উপায়?
- গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস সুস্থ থাকার উপায়? গর্ভাবস্থায় অনেকেরই প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। যদি এটি সময়মতো সনাক্ত না করা হয় তবে এটি অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে। তাই প্রস্রাব পরীক্ষা করা উচিত। ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত সেরে উঠতে হবে। মূত্রনালীর সংক্রমণ সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা যায়।
- Rh বা Rhesus ফ্যাক্টর খুঁজে বের করার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস সুস্থ থাকার উপায়? সেই সঙ্গে জানতে হবে রক্তে আয়রনের পরিমাণ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
- এ ছাড়া রুবেলা, এইচআইভি, হেপাটাইটিস, সিফিলিস আছে কি না তা জানতে এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
- প্রথম তিন মাস একজন নির্দিষ্ট ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা ভালো। এতে আপনি নিজের এবং আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।
- ডাক্তারের কাছে একা যাবেন না পরিবারের সদস্য বা বন্ধুর সাথে যান। এতে গর্ভবতী নারীর মানসিক ভয় ও জড়তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
১. গর্ভবতী একবার নিশ্চিত হয়ে গেলে,তারপর থেকে সাবধানে চলুন। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, ধূমপান এড়িয়ে চলুন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাই হোক না কেন। কারণ এই সময়ে এই জিনিসগুলো অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুর।
২. গর্ভাবস্থার কারণে শরীরে বেশ কিছু হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা, ফলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, খেতে না পারা, শরীরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু সবাইকে এই সমস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, অনেক মা এইগুলির কোনওটি অনুভব করেন না বা কখনও কখনও একটি একক উপসর্গও অনুভব করেন না। ভয় পাবেন না যদি এটি ঘটে, আবার এটি না ঘটলেও ভয় পাবার কারন নেই। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, বেশি বমি হলে সকালে উঠে লেবু পানি পান করুন। আর মাথা ঘোরা হলে শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
৩. যেহেতু আপনি গর্ভবতী, আপনার সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ডাক্তার বেছে নিন। ডাক্তার বাছাই করার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন, যে কোন সময় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব কিনা, কোন প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যাচ্ছে কিনা।গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, এছাড়াও দূরত্বের খেয়াল রাখুন। যেহেতু আপনি গর্ভবতী, আপনি এই সময়ে বেশি নড়াচড়া করতে পারবেন না। কারণ এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে যত্নবান হওয়া উচিত।
৪. সন্তান ধারণ করলে কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা. যেহেতু শিশুকে জরায়ুতে রাখা হয় এবং জরায়ুটি মূত্রনালীর উপরে অবস্থান করে, তাই শিশুর বৃদ্ধির সাথে সাথে জরায়ু মূত্রনালীতে কিছুটা চাপ দেয়। ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাবে। প্রথম ৩ মাস এবং শেষ ৩ মাসে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
৫. এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে ধীরে ধীরে স্তনের আকার পরিবর্তন হয়। কারণ এতে স্তন ব্যথা হবে এবং স্তন নরম হয়ে যাবে। এমন হলে ভয় পাবেন না। মনে রাখবেন এই পরিবর্তন আপনার সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৬. অনেক মায়ের বুকজ্বালা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা অন্য মহিলাদের তুলনায় খাবার হজম করতে এবং তাদের পেট খালি করতে বেশি সময় নেয়, কারণ শিশুর খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে একটু বেশি সময় লাগে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, কিন্তু এই কারণটা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গর্ভবতী মহিলারা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বুকজ্বালায় ভুগতে পারেন। আতঙ্কিত হবেন না. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যেকোনো ওষুধ খেতে পারেন।
৭. এছাড়াও অনেক গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। কারো কারো রক্তচাপ বাড়তে পারে, আবার কারোর কমতে পারে। সুগারের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই সন্তান গর্ভধারণের পর চিকিৎসকের উচিত একবার সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা যে গর্ভধারণ স্বাভাবিক আছে কি না। এ ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।
৮. আপনি যা করছেন তা “গর্ভাবস্থা নিরাপদ” কিনা তা জানতে ভুলবেন না। ভারী কোনো কাজ একেবারেই করবেন না। মনে রাখবেন প্রথম তিন মাসে খুব সতর্ক থাকতে হবে কারণ এই তিন মাসে এবরশনের হার সবচেয়ে বেশি থাকে। এছাড়াও শিশুর জন্য খারাপ হবে এমন খাবার খাবেন না। পেঁপের পাশাপাশি আনারস, কাঁচা বা আধা সেদ্ধ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম এড়িয়ে চলতে হবে। প্রোটিন ভালো করে রান্না করতে হবে। এছাড়াও গলানো পনির বা এই জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রথম ৩মাসে,খেতে অসুবিধা হয়, এমনকি কিছু খেতে না চাইলেও, শিশুর কথা চিন্তা করে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৯. এছাড়াও একজন গর্ভবতী মহিলা সব ধরণের অনুভূতি অনুভব করেন যেমন তিনি গর্ভবতী জেনে খুশি, উদ্বিগ্ন, প্রফুল্ল এবং ক্লান্ত। এতগুলো জিনিস একসঙ্গে ফিট করাটা একটা বড় ব্যাপার। অনেকেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারেন না। ফলস্বরূপ, তিনি মেজাজ পরিবর্তনের শিকার হন। এছাড়াও, বিভিন্ন “হরমোনের পরিবর্তন” রাগ বা হতাশার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা, এই ধরনের ক্ষেত্রে,আপনাকে উত্তেজনা এড়ানো উচিত। কারণ খুব বেশি উত্তেজনা অনাগত সন্তানের জন্য ভালো নয়।
আপনার সঙ্গীর সাথে ধৈর্য ধরুন। মনে রাখবেন আপনি যেমন মা হচ্ছেন, তিনিও বাবা হচ্ছেন। আপনি যদি তার সাথে কিছু ভুল দেখেন তবে রাগ না করে তাকে সাহায্য করুন এবং কিছু খারাপ লাগলে তাকে বলতে ভুলবেন না।
১০. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যে কোন ঔষধ গ্রহণ করুন। গ্যাসের সমস্যা বা মাথাব্যথা বা জ্বর থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, ঘুমের সময় বাড়ান। ৮ থেকে ১০ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। সারাদিনের কাজের মাঝে হালকা বিশ্রামও নিতে পারেন।
গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
গর্ভধারণের আগে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, গর্ভাবস্থা প্রতিটি মহিলার জীবনে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেকে গর্ভধারণের পর চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেন বা খাবারের ব্যাপারে খুবই সচেতন হন। কিন্তু গর্ভধারণের আগে কি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে? অবশ্যই, আপনি গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় থেকেই আপনার খাদ্য পরিবর্তন এবং একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট শুরু করা আপনাকে অনেক উপায়ে সাহায্য করতে পারে। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস যা জানা জরুরী, একটি সঠিক এবং সুষম খাদ্য আপনার অনাগত শিশুর বিভিন্ন জন্মগত জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে।