বহুদিন ধরেই চীনা সরকারের মদদে উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তবে গত মাসে মার্কিন বিদায়ী সরকার এ নিয়ে কথা বললে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিদায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, উইঘুর ও অন্যান্য মুসলমানদের উপর নিপীড়ন চালানোর সময় গনহত্যা চালাচ্ছে চীন। তার বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করেন নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ব্যাপারে বলেন, সেখানে ‘গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংগঠিত হয়েছে।
গত ২২ শে ফেব্রুয়ারী কানাডা হাউজ অফ কমন্সে উইঘুরদের প্রতি চীনা নিপীড়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভোটগ্রহন করা হলে, এর পক্ষে-বিপক্ষে ২৬৬-০টি ভোট পড়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনা গনহত্যার ব্যাপারে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিলো কানাডা। তবে ভোটগ্রহনের সময় অনুপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো এবং তার অধিকাংশ মন্ত্রীসভা।
এদিকে গ্লোবাল লিগ্যাল একশন নেটওয়ার্ক, ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস ও উইঘুর হিউম্যান রাইট প্রজেক্ট নামক সংস্থার উদ্যোগে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো ‘চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর জনগোষ্ঠীর উপর চীনা সরকার গনহত্যার তৎপরতা চালাচ্ছে’- এ বিষয়ক আনুষ্ঠানিক মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। এ মতামতটি লিখেছেন লন্ডনের এক্সেস কোর্ট চেম্বারের একাধিক জ্যেষ্ঠ ব্যারিস্টার। এই আইনগত মতামতে জোরালো দাবি করা হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং স্বয়ং এই মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। আরো দাবী করা হয়েছে, এই অভিযোগের স্বপক্ষে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রমান আছে।
বিবিসির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে কথিত ‘সংশোধনাগার শিবিরে’ উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোরপূর্বক আটকে রেখে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনতে জোরপূর্বক অ্যালকোহল এবং শূকরের মাংস খাওয়ানো হচ্ছে- যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া সেখানে উইঘুর নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যা করে দিচ্ছে এবং শিশুদের তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অনুসন্ধানে সেখানকার নারীদের পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করারও প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার তথ্যানুসারে, উক্ত শিবিরগুলোয় অন্তত ১০ লাখ মুসলিম সংখ্যালঘু বন্দী রয়েছে।
উইঘুর সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজের সম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে চীন। অভিযোগে বলা হয়েছে, উক্ত সংবাদমাধ্যম চীনের সম্প্রচারের নীতিমালাগুলো ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘খবরের সত্যতা ও নিরপেক্ষতা’ এবং ‘চীনের জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি না করার’ নীতিমালা।
বরাবরের মতোই উইঘুরের উপর নিপীড়নের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেই দাবি করে আসছে চীন সরকারের বিভিন্ন মুখপাত্র। সর্বশেষ গতকাল রবিবার বেইজিংয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, তাঁর দেশের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ‘হাস্যকরভাবে অযৌক্তিক’ উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এবং ‘ডাহা মিথ্যা’। তিনি বলেন, পশ্চিমা রাজনীতিবিদেরা জিনজিয়াংয়ে ঘটনায় মিথ্যা তথ্যের ওপর আস্থা রাখছেন। চীনের পক্ষ থেকে ওই অঞ্চল পরিদর্শনে সবাইকে স্বাগত জানানো হবে। ওয়াং ইর বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জিনজিয়াংয়ে তথাকথিত গণহত্যা হাস্যকরভাবে অযৌক্তিক। এটি হীন উদ্দেশ্যে এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যে ভরা একটি গুজব।
বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন, উইঘুর গনহত্যার সত্যতা মিললে চীনের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। এরফলে দেশটির অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আসছে ২০২২ সালে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক বর্জন করার দাবি তুলেছে অনেকেই। তবে এখনো গতকাল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জানা যায় নি।
Reporter: Nanjiba Naowar