রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় একটি খেলার মাঠ পুলিশকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তিন শিশুকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় চার পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পুলিশের এক অতিরিক্ত উপকমিশনারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার পৃথক অফিস আদেশে তাদের প্রত্যাহার ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে বলে পুলিশের রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলিয়া মাঠে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে পুলিশ। এ কারণে গত ৩১ জানুয়ারি মাঠটি তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে নেয় তারা। কিন্তু স্থানীয় শিশু-কিশোররা তাদের খেলার মাঠে ভবন নির্মাণ করতে দিতে রাজি নয়। তারা খেলতে চায় উন্মুক্ত মাঠে।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সেদিন (৩১ জানুয়ারি) সারা দিনই সেখানে খেলাধুলা করে তারা। এ ঘটনায় রাতে তিন শিশুকে কলাবাগান থানা-পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আর কখনো তারা মাঠে খেলতে আসবে না এবং মাঠ চাই না-এমন স্বীকারোক্তি নেয়া হয় শিশুদের কাছ থেকে। সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে রাখে পুলিশ।
পুলিশের কাছ থেকে শিশু নির্যাতনের এমন ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কলাবাগান থানার এসআই নয়ন সাহা ও তিন কনস্টেবল প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওই ঘটনায় পুলিশের চার সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসলে কী ঘটেছিল, সেটি যাচাই করবে এই কমিটি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই পুলিশ সদস্যদের রমনা ডিসি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তেঁতুলিয়ার মাঠটি কলাবাগান থানা ভবনের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর। আইনি প্রক্রিয়া মেনেই সেটি কলাবাগান থানার জন্য নেওয়া হয়েছে। এরপরই ৩১ জানুয়ারি মাঠে ডিএমপির পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে লেখা আছে ‘তেঁতুলিয়া মাঠ, কলাবাগান থানা ডিএমপি, ঢাকার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত।’
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে, সাইনবোর্ড টানানোর পর থেকেই শিশু-কিশোররা আন্দোলনে নামে। তাদের দাবি, এলাকায় খেলার মাঠ নেই। সুতরাং তারা এই মাঠটিতে ভবন নির্মাণ করতে দেবে না। এটি খেলার জন্যই রাখা হোক। শিশু-কিশোরদের অভিভাবকদেরও একই দাবি। ওই মাঠে প্রতি বছর ঈদের জামাত ছাড়াও এলাকার মানুষ মারা গেলে সেখানে গোসল করানো এবং তাৎক্ষণিকভাবে লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়।