সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা ‘অন্যায়ভাবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, তাঁদের তালিকা করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনাদের স্ত্রীরা শাড়ি পরে, সন্তানেরা চলে। সুতরাং জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না।’ শেখ হাসিনার পক্ষে থাকলে কারও জন্যই মঙ্গল হবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় শ্যামপুরের লালপুর মসজিদসংলগ্ন খোলা জায়গায় আয়োজিত এক সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীর ১৬টি স্থানে বিএনপি যে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল, সে কর্মসূচির শেষ দিন ছিল আজ। এ দিন সমাবেশের আয়োজন করে শ্যামপুর ও কদমতলী থানা বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফ্যাসিবাদী জনগণের হাতে পরাস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে। এই সরকারকেও বিদায় নিতে হবে। সেই বিদায়টা কতটুকু করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে হবে, না স্বাভাবিকভাবে নেবে, সেই সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে নিতে হবে।
আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া মনে হয় নির্বাচন করতে পারবেন না—আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যে নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না, সেই নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। সেই নির্বাচন জনগণ বাংলাদেশে করতে দেবে না। সুতরাং আইনমন্ত্রী বেআইনি ভাষায় কথা বলা বন্ধ করেন। নিজে আইনমতো সরকারে আসেন নাই। আসছেন বেআইনিভাবে। সুতরাং পথ খোলা আছে, এখনো সময় আছে সোজা ঘরে ঢুকে যান। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দিয়ে দেন।’
আজকের সমাবেশে বিএনপির নেতা–কর্মীদের লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে তাতে পতাকা টাঙিয়ে না আসার নির্দেশনা একজন পুলিশ কর্মকর্তা দিয়েছেন বলেও জানান গয়েশ্বর রায়। এমন নির্দেশনার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই অধিকার আপনি কোথায় পেলেন? এই অনধিকার চর্চা করার সাহস আপনাকে কে দেয়?’
বেশি দালালির কারণে আপনাদের দুর্দশা অতি সন্নিকটে, এমন মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যাঁরা বলেছেন লাঠি নিয়ে আসতে পারবেন না, সেই পুলিশকে বলব, আমাদের সভা–সমাবেশে পুলিশ বাহিনীর লোক যখন আসবেন, তখন তাঁরা কোমরে পিস্তল, হাতে লাঠি নিয়ে আসতে পারবেন না। খালি হাতে আসতে হবে। আর আওয়ামী লীগ যদি লাঠি নিয়ে আসে, সেটা আপনি কীভাবে বন্ধ করবেন, সেই কৈফিয়ত দিতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আজম, বিএনপির বৈদেশিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা আড়াইটা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বেলা একটা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বিএনপির ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশ ঘিরে আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে বিএনপির এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।