করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে একপ্রকার বিধস্ত করে দিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। এর মধ্যেই ভারতীয় চিকিৎসকরা কোভিড থেকে যারা সেরে উঠছে বা ইতোমধ্যে সেরে উঠেছেন সেসব রোগীদের শরীরের মধ্যে এক বিরল প্রজাতির ইনফেকশন এর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। যাকে বলা হচ্ছে – ব্লাক ফাঙ্গাস। মিউকরমাইকোসিস প্রজাতির ফাঙ্গাস এর সংক্রমণের ফলে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন বা কালো ছত্রাক সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে বলে চিকিৎসকরা রিপোর্ট করেছেন।
মিউকরমাইকোসিস আসলে কি? কেন হয়?
ভারতের চিকিৎসক ডাঃ নায়ার এর মতে মিউকরমাইকোসিস খুব বিরল একটি সংক্রমণ। এটি দেহের শ্লেষ্মার সাথে ছত্রাকের সংস্পর্শের ফলে ঘটে।এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস থেকেও ছড়ায়৷ এই ছত্রাক সাধারণত মাটি, গাছপালা, সার এবং ক্ষয়িষ্ণু ফল এবং শাকসবজিতে দেখা যায়। এটি সর্বব্যাপী এবং মাটি এবং বাতাসে এমনকি স্বাস্থ্যকর মানুষের নাক এবং শ্লেষ্মেও পাওয়া যায়। এটি সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এবং ডায়াবেটিস বা মারাত্মক ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তি যেমন ক্যান্সারের রোগী বা এইচআইভি / এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
কোভিড ভাইরাসের কারণে যখন রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম থাকে, তখন সেই ব্যক্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় বলে পরবর্তীতে ‘মিউকোরমাইকোসিস’ বা এ ধরনের কালো ফাঙ্গালের ইনফেকশন হতে পারে। রক্ত, চামড়া, মুখ, নখসহ শরীরের নানা জায়গায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন হতে পারে এবং সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
এর ফলে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত স্টাফি নাক এবং নাকে রক্তপাতের লক্ষণ থাকে; চোখ ফোলা এবং চোখে ব্যথা হয়, চোখের পাতা ঝাঁকুনি দেয় এবং দৃষ্টিশক্তি অস্পষ্ট এবং পরিশেষে হ্রাস পায়। নাকের চারপাশের ত্বকে কালো প্যাচ থাকতে পারে। নাক দিয়ে কালো কিছু বের হওয়ার লক্ষণও দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও ফেলতে পারে বলে ভারতীয় চিকিৎসারা বলেছেন। আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস দুর্বল থাকায় সহজেই ফুসফুসে আক্রমণ করে এই ছত্রাক। এরপর তা ধীরে ধীরে পুরো শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।
মুম্বাইয়ের তিনটি হাসপাতালে কর্মরত ডাঃ নায়ার জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে এপ্রিল মাসে প্রায় ৪০ জন রোগীকে ছত্রাকের সংক্রমণে ভুগতে দেখেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন যারা বাসায় থেকেই কোভিড -১৯ থেকে চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছিলেন । তাদের মধ্যে এগারজনের সার্জিকালি চোখ অপসারণ করতে হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতের পাঁচটি শহরে মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি এবং পুনেতে এই সংক্রমণের ৫৮টি ঘটনা ঘটেছে। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী এই ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হন। (সূত্র BBC News)