বিসিএস ক্যাডার হবার জন্য দেশ সেরা মেধাবী হতে হবে কেন? এই কন্সেপ্ট’টাই তো ভুল।
যে দেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় নিয়ম করে মানুষ মারা যায়। সামান্য একটা রোগ হলে পাশের দেশে দৌড়াতে হয়। যে দেশে ব্রীজ বানানোর আগেই ফাটল দেখা যায় কিংবা ভেঙে পড়ে। যে দেশে ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা ভিসি হয়ে দিনে রাতে নিয়োগ বাণিজ্য করে বেড়াচ্ছে। সেই দেশে বিসিএস ক্যাডার (জেনারেল) হবার জন্য দেশ সেরা মেধাবী হবার প্রয়োজন হয়।
আহা, কি চমৎকার একটা দেশ। ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র পুলিশ অফিসার হতে চায়। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায়। আইন নিয়ে পড়া ছাত্র বিসিএস রেলওয়ে ক্যাডার হবার স্বপ্ন দেখে বেড়াচ্ছে!
যে কেউ যে কোন পেশা বেছে নিতে পারে। আমার আসলে এতে কোন আপত্তি নেই। আমার আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে- তাহলে প্রতি বছর জেলায় জেলায় ইউনিভার্সিটি কেন খুলছেন? এইসব সাবজেক্ট পড়ে কি লাভটা হচ্ছে?
পত্র-পত্রিকায় অনেকবার লিখেছি। আবারও বলি- বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা সবার জন্য নয়।যারা ওই বিষয় নিয়ে সত্যিই বেশি কিছু জানতে চায়। কাজ করতে চায়। কিংবা গবেষণা করতে চায়। স্রেফ তারাই পড়বে। নইলে এইচএসসি পর্যন্ত পড়লেই যথেষ্ট। কিংবা ভোকেশনাল পড়াশুনা।
বিসিএস পরীক্ষা আপনারা ইন্টার পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের নিন। সেখান থেকে মেধাবী বাছাই করার পর তাদেরকে চার বছরের জন্য তাদের পছন্দের ক্যাডার বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউনিভার্সিটিতে পাঠান। চার বছর পড়া শেষ করে এক বছর ট্রেনিং করবে। এরপর চাকরিতে জয়েন করবে।
লাখ-লাখ, কোটি-কোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিসিএস ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে বসে আছে। এভাবে আর যা-ই হোক, একটা জাতি কোন দিনও এগুবে না।
এতো এতো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী প্রতি বছর বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে। এরপরও দেশের এই অবস্থা কেন? এয়ারপোর্টে নামলে প্রথম যে বিষয়টা মাথায় আসে- পৃথিবী নামক এই গ্রহে এর চাইতে জঘন্য এয়ারপোর্ট কি কোন দেশে আছে?
এশিয়া-ইউরোপ কিংবা আমেরিকা মহাদেশের কথা বাদ’ই দিলাম। এমনকি দরিদ্র আফ্রিকা মহাদেশের কোন দেশের এয়ারপোর্টেও আমি এতো জঘন্য অবস্থা দেখিনি।
বিদেশ থেকে কষ্টে উপার্জনের টাকা কাস্টমসে ডিক্লেয়ার করার জন্য এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিসে গিয়েছি; কাজ শেষে ভদ্রলোক বলে বসেছে- চা খাবার জন্য কিছু দিবেন না? এরপর গিয়েছি বাথরুমে। দেখি বাথরুমে কোন টিস্যু নেই! এরপর দেখি বাথরুম পরিষ্কার করার দায়িত্বে যে আছে; মানে ক্লিনার ছেলেটা হাতে টিস্যু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করছে-স্যার, টিস্যু লাগবে? নেয়ার পর বলছে- স্যার বকশিশ? অর্থাৎ টয়লেটের টিস্যু সে নিজেই বগলদাবা করে এভাবে বকশিশ নিয়ে বেড়াচ্ছে এয়ারপোর্টের বড় কর্তাদের সামনেই।
এই হচ্ছে মেধাবী বিসিএস ক্যাডারদের বাংলাদেশ। আর নিশ্চয় ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই- কেন সবাই ক্যাডার হতে চায়।