সম্ভব হলে আগে আগেই বিয়ে করুন। এরপর সন্তান নিন। তাদেরকে এমনভাবে বড় করুন যেন তারা দায়িত্ব নিতে শিখে। এরপর যখন আপনার বয়স হয়ে যাবে তখন তারাও আপনার দায়িত্ব নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ।
আধুনিক সমাজ “ব্যক্তিস্বাধীনতা”-র ওপর অনেক বেশী ফোকাস করে। কিন্তু এটার উলটোপিঠটা কি জানা আছে আমাদের?
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউ কি পুরোপুরি স্বাধীন হয়? মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে তখন সে পুরোপুরি বাবা-মায়ের স্নেহ-যত্নের ওপর নির্ভরশীল হয়েই আসে। আবার যখন তার বয়স হয়ে যায়, সে তখন তার চেয়ে অল্প বয়সীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর মাঝামাঝিতে যারা আছে তারা শারীরিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হয় বটে।
আধুনিক পশ্চিমা সেকুলার সমাজে যে ব্যক্তির শক্তিসামর্থ্য আছে, সে এই স্বাধীনতার ফায়দা সম্পূর্ণভাবে স্বার্থপরভাবে ব্যবহার করে। সে এখানে সেখানে ভ্রমণ করে বেড়ায়, বিভিন্ন “অভিজ্ঞতা” অর্জন করে, “অ্যাডভেঞ্চার”-এ বের হয়য়। পুরোপুরি “স্বাধীনতা”। কারো প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। কেবল আমি, আমি আর আমি। ফলে তারা ২০-৪০ বছর বয়সের সময়টা কেবল নিজের জন্য বাঁচে।
এরকম জীবনযাত্রা করতে পারাটাকে স্বপ্ন হিসেবে বেচা হয়। বিশেষ করে নারীদের কাছে। “নারীরা এগিয়ে যাক, নারীরাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে”-ইত্যাদি আরো কত কথা। আমাদের মতো নারীদের নিজেদের যৌবনকে এভাবে স্বার্থপরতার সাথে ব্যবহার করতে বলা হয়। বলা হয় নিজের পায়ে দাঁড়াতে, স্বনির্ভর হতে। মূলত ভ্রমণ করা আর কোনো পেইড চাকরি করা। যা ইচ্ছা তা-ই করো সমস্যা নেই। কিন্তু ভুলেও বিয়ে করা যাবে না, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। তাহলে সব স্বাধীনতা চলে যাবে।
কেন?
কারণ তারা বিয়েকে দাসত্ব মনে করে, মাতৃত্বকে জেলখানা মনে করে।
আমাদের বলা হয় যে আমাদের অর্থাৎ নারীদের স্বাধীনতা পরিবার বা স্বামী-সন্তানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আগের সমাজে যিনি শারীরিকভাবে স্বাধীন বা আত্মনির্ভরশীল ছিলেন তিনি তার স্বাধীনতা অন্যের জন্য উৎসর্গ করে দিতেন। যেমন, তিনি তাইরে-নাইরে করে ঘুরে না বেড়িয়ে সঠিক সময়ে বিয়ে করতেন, স্ত্রীর দায়িত্ব নিতেন, সন্তান নিতেন।
কেন?
এরকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করে যে, আজ যে ব্যক্তি অন্যের ওপর নির্ভরশীল নয় সে-ও তো একদিন নির্ভরশীল হবেই। তাই সে আজ তার স্বাধীনতা কিছুটা খর্ব করুক অন্যের জন্য। যেন সে ভবিষ্যতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলে অন্যেরাও তার জন্য তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে।
পশ্চিমা সেকুলার সমাজ এই কমন সেন্সকে পরিত্যাগ করেছে এবং এখন এর দাম চুকাচ্ছে। কীভাবে দাম চুকাচ্ছে আসুন দেখিঃ
- মানুষেরা এখন দেরিতে বিয়ে করছে। তারা কেবল নিজেদের “স্বাধীনতা” নিশ্চিত করে এরপর বিয়েতে “থিতু” হতে চায়।
- নারীরা তাদের জীবনের স্বর্ণালি সময়গুলো নষ্ট করে এবং নিজেদের গর্ভধারণের সময়কে সংকুচিত করে নিজেদের স্বাধীনতা লাভের পেছনে ছুটতে ছুটতে। ফলে তারা সহজে সন্তানগ্রহণ করতে পারে না।
- মানুষ অল্প সন্তান নেয়।
- যখন তারা সন্তান নেয়, তখন তারা ক্যারিয়ার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে সন্তানের জন্য সময় বের করতে পারে না। ফলে তারা সন্তানকে ছয় সপ্তাহ বয়স থেকেই ডে-কেয়ারে রাখা শুরু করে দেয়। ফলে সন্তান লালিতপালিত হয় অপরিচিতদের হাতে। এরপর তারা তাদেরকে স্কুলে দেয়।
- পশ্চিমা ঘরগুলো খালি ও অনুর্বর থাকছে। অধিকাংশ সময়ে পিতামাতা ও শিশুরা ঘরের বাইরে থাকছে (প্রথমজন কর্মক্ষেত্রে এবং দ্বিতীয়জন স্কুলে)।
- যখন পিতামাতারা বয়স্ক হয়, তাদের সন্তানরা বড় হয়, তখন সন্তানরা তাদের পিতামাতাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় যেখানে বয়স্ক পিতামাতার দেখাশোনা করে অপরিচিত লোকজন।
- পশ্চিমে জন্মহার এত কমে গেছে যে আগের জায়গায় পৌঁছানো আর সম্ভব নয়।
এতে পশ্চিমাদের মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে কারণ তারা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। আরবে একটা কথা প্রচলিত আছেঃ
قال الحكيم: خير الزواج مبكره.
قيل له: ولم؟
قال: لأنه الطريق الوحيد لإنجاب والد يعينك في طفولة شيخوختك.
জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, “আগে আগে যে বিয়ে করা হয় সেটাই সর্বোত্তম।”
তাকে জিজ্ঞেস করা হল, “কেন?”
তিনি জবাব দিলেন, “কারণ তুমি একদিন বয়স্ক হবে। বয়স্কে মানুষ আবার শৈশবের অবস্থায় ফিরে যায়। তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে তুমি এমন সন্তানাদি জন্ম দিতে পারবে যারা তোমার বৃদ্ধ বয়সে তোমার দেখভাল করতে পারবে।”
আজকের পৃথিবীতে মানুষ বঞ্চিত বোধ করে। নিজেদের শিশুদের মতো নির্ভরশীল ভাবে। এটা ঘটে শৈশব ও বার্ধক্য উভয় বয়সেই। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক আর কি হতে পারে।
*উম্মু খালিদের লেখা অবলম্বনে