ছাত্ররাজনীতি করবেন না মর্মে অঙ্গীকার করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ভর্তি হতে হয় শিক্ষার্থীদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুধু ছাত্রলীগের প্রকাশ্য রাজনীতি রয়েছে।কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়ার হাতে। তাঁর ছাত্রত্ব নেই। তিনি বিবাহিত ও কন্যাসন্তানের জনক। বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) পাঁচ বছরের হলেও তিনি ১৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। থাকছেন হলে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইলিয়াসের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিয়োগ-বাণিজ্য, দরপত্র ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষকের ওপর হামলা, হল দখল, অস্ত্রবাজি, খুনসহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা ও অপরাধ ঘটিয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী চাকরি ও ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে অসহায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও বর্তমান উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলছেন, ‘আমি নিয়মের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাব, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কাজ করব।’
ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু যেভাবে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নাম দিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের তত্কালীন শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। একই সঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ফোরাম নাম দিয়ে মার্কেটিং বিভাগের তত্কালীন শিক্ষার্থী মইনউদ্দিন সফিকুর রহমান চিশতী ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এমদাদুল বারী ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস মিয়ার বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষকের ওপর হামলা, অস্ত্রবাজিসহ নানা অভিযোগ।এই দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই মারামারি হতো। এক মারামারির ঘটনায় মইনউদ্দিন প্রতিপক্ষের হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। এতে তাঁর পিঠে ১২৭টি সেলাই পড়ে। একপর্যায়ে এই পক্ষ পিছু হটে।এরপর ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাজনীতিমুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৮ মে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াস মিয়াকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটির মেয়াদ শেষ। এ ছাড়া নেতাদের অর্ধেকের ছাত্রত্ব নেই। বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। এই কমিটিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আসামিরাও।এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদলের একটি কমিটি রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।