রাজবাড়ী সদর উপজেলায় এক গৃহবধূকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার দুই মাস চার দিন পর তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আজ শুক্রবার তিনি রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমি সাহার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম লতিফ কাজী। তাঁর স্ত্রীর নাম বিউটি খাতুন (৩০)। লতিফ কাজী রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বার্থা গ্রামের বাসিন্দা। বিউটি-লতিফ দম্পতির ১১ ও ৪ বছর বয়সী দুটি সন্তান আছে। ১৯ জানুয়ারি বিউটিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, লতিফ কাজী কুষ্টিয়ায় অবস্থান করছিলেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কুষ্টিয়া থেকে বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাঁকে রাজবাড়ী থানায় নিয়ে আসা হয়। আজ সকালে তাঁকে রাজবাড়ী আদালতে পাঠানো হয়। পরে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিকেলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার পরদিন বিউটি–লতিফ দম্পতির ১১ বছর বয়সী মেয়ে জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডের রাতে তার মা পোলাও, মুরগির মাংস ও পায়েস রান্না করেছিলেন। মা–বাবার সঙ্গে তারা দুই ভাই-বোন খাওয়াদাওয়া করে। এরপর সে আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। মা-বাবার সঙ্গে ছোট ভাই ঘুমাচ্ছিল। রাতে ভাইয়ের কান্নার শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। নিজের কক্ষ থেকে বের হয়ে সে দেখতে পায়, মায়ের বুকের ওপর বসে বাবা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করছেন। সে থামাতে গিয়ে হাতে আঘাত পায়। এরপর দৌড়ে পাশের বাড়ির চাচাকে ডেকে ঘুম থেকে তোলে। সবাই এসে দেখে, তার বাবা পালিয়ে গেছেন।
বিউটি খাতুনের চাচা বানিবহ ইউপির সদস্য আবদুস সালাম মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাতিজিকে হত্যার পর সে কুষ্টিয়া গিয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কুষ্টিয়া রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় আমিও সঙ্গে ছিলাম। সে আমার নিষ্পাপ ভাতিজিকে হত্যা করেছে। আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল হোসেন বলেন, সকালে লতিফকে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর দুপুরে তাঁকে বিচারকের কাছে হাজির করা হয়। তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেলা তিনটার দিকে তিনি বিচারকের কক্ষ থেকে বের হন। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাজবাড়ীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, হত্যার পর নিহত নারীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে একমাত্র আসামি লতিফ পলাতক ছিলেন। প্রায়ই স্ত্রীকে মারধর করতেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা চলছিল। অবশেষে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর আগে মহিষবাথান গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল মোল্লার মেয়ের সঙ্গে প্রতিবেশী বার্থা গ্রামের বাসিন্দা মতিয়ার কাজীর ছেলে লতিফ কাজীর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২০০ মিটার। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে লতিফ তৃতীয়। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে লতিফ ও বিউটি বসবাস করতেন। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনায় স্ত্রীকে মারধর করতেন লতিফ। এ ঘটনায় অনেকবার স্থানীয়ভাবে সালিস হয়েছে। লতিফ বিভিন্ন রবিশস্যের ব্যবসা করতেন। মৌসুমের সময় শস্য কিনে রেখে দিতেন। পরে ভালো দামের বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনা শুরুর পর থেকে তাঁর এসব ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।