কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? সংসার জীবন সুখের হোক প্রত্যেক স্ত্রীর একান্ত কাম্য। আর সংসার জীবন সুখের করতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকা জরুরী। স্বামীকে খুশি করতে স্বামীকে প্রাধান্য দিন, স্বামীর বিশেষ বিশেষ দিনে কিছু দিতে না পারলেও অন্তত শুভেচ্ছা টুকু বিনিময় করুন, স্বামীকে কারও নিকট ছোট করবেন না, স্বামীর প্রসংশা করুন, তাঁর প্রতি আনুগত্য থাকুন।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? আসুন জেনে নেয়া যাক।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনারা বাস্তব জীবনে তা মেনে চলে দাম্পত্য জীবনকে আরও সুখের করে তুলবেন।
সুন্দরভাবে অভ্যর্থনা জানান
আপনার স্বামী যখন কাজ, স্কুল বা ভ্রমণ থেকে ফিরে আসবে তখন তাঁকে স্বাগত জানান সুন্দর অভ্যর্থনা দিয়ে।
প্রফুল্ল মুখে তার সাথে দেখা করুন।
নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপন করুন, সুগন্ধি মাখুন।
তিনি ঘরে প্রবেশ করলে কোনো সুসংবাদ দিন। খারাপ খবর থাকলেও শুরুতে বলবেন না। তাঁকে বিশ্রাম নিতে দিন। পরে সুযোগ বুঝে বলুন।
প্রেমময় ও আকুল বাক্যে তাকে স্বাগত জানান।
তাঁর জন্য চমৎকার সব খাবার রান্না করে রাখুন, সময়মতো প্রস্তুত রাখুন।
নিজেকে সাজান, স্বর নরম রাখুন।
*এটা কেবল আপনার স্বামীর জন্যই। কখনই গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে এটা করবেন না।
শরীরের গন্ধের দিকে খেয়াল রাখুন, নিজেকে সাজান
আপনার দেহ ও ফিটনেসের দিকে খেয়াল রাখুন।
সুন্দর, আকর্ষণীয় কাপড় ও পারফিউম ব্যবহার করুন।
নিয়মিত গোসল করুন। পিরিয়ডের পর রক্তের সকল দাগ, দুর্গন্ধ ও বিশেষ করে চুল দূর করুন।
আপনার স্বামী যেন আপনাকে নোংরা কাপড়ে না দেখে।
নিষিদ্ধ ধরনের অলঙ্করণ যেমন ট্যাটু এড়িয়ে চলুন।
আপনার স্বামী পছন্দ করে এমন পারফিউম, রং ও পোশাক ব্যবহার করুন।
মাঝে মাঝে চুলের স্টাইল ও পারফিউম ইত্যাদি পরিবর্তন করুন।
তবে এসব বিষয়ে বাড়াবাড়ি এড়িয়ে চলবেন। আর এগুলোর ব্যবহার কেবল নারী ও গায়রে মাহরাম পুরুষের মধ্যে সীমিত রাখুন।
সহবাস
আপনার স্বামী সহবাসের তাড়না বোধ করলে তার সামনে নিজেকে উজাড় করে দিন।
আপনার বডি পরিষ্কার রাখুন, খেয়াল রাখবেন আপনার দেহ থেকে যেন বাজে গন্ধ না আসে। সহবাস থেকে নির্গত তরল বা বীর্য থেকে নিজেকে যথাসম্ভব পরিষ্কার করে নেবেন।
স্বামীর সাথে প্রেমময় বাক্য আদানপ্রদান করুন।
আপনার স্বামী যেন নিজের চাহিদা পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
স্বামীকে উত্তেজিত করার জন্য উপযুক্ত সময় বেছে নিন, তাঁকে সহবাস করতে উৎসাহিত করুন, যেমন, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর বা সপ্তাহের শেষে ইত্যাদি।
আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকুন
আপনার স্বামী গরিব বা বড় চাকরি করেন না – এর জন্য আপনি বিষণ্ণ বা হতাশ হবেন না।
আপনি দরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী লোকদের দিকে তাকান এবং নিজের অবস্থার দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া আদায় করুন।
স্মরণ রাখবেন, প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে ইমান ও তাকওয়া।
পার্থিব জিনিসের প্রতি উদাসীনতা
দুনিয়াবি আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন।
আপনার স্বামীর কাছে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশী বেশী চাইবেন না।
যুহদ মানে হালাল ও জায়িজ বিষয়গুলো উপভোগ করা নয়। বরং আখিরাতের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ রাখা, আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন সেগুলোকে জান্নাত অর্জনে কাজে লাগানোই যুহদ।
আপনার স্বামীকে খরচ কমাতে এবং কিছু অর্থ সঞ্চয় করতে উত্সাহিত করুন যাতে সেই সম্পদ দান করা যায় এবং দরিদ্র ও অভাবী লোকদের খাওয়ানো যায়।
প্রশংসা
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে জাহান্নামের অধিকাংশই নারী কারণ স্বামীরা তাদের প্রতি যেসব ভালো কাজ করে তার প্রতি তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।
আপনি স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ হলে তিনি আপনাকে আরও বেশি ভালবাসবে এবং আপনাকে আরও বিভিন্ন উপায়ে খুশি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? উনার প্রতি অকৃতজ্ঞ হলে উনি হতাশ হবেন এবং নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করবেন যে, ‘আমি কেন তার জন্য ভাল কিছু করতে যাব? এত করেও তো তার মন জয় করতে পারি না।’
ভক্তি ও আনুগত্য
স্বামীকে এমনিতেই ভক্তি ও আনুগত্য তো করবেনই। বিশেষ সময়ে যেমন স্বামী অসুস্থ হলে বা ব্যবসায় বিপর্যয়ের সময় তার পাশে থাকবেন।
প্রয়োজনে আপনার নিজের কাজ, টাকাপয়সা ও সম্পত্তির মাধ্যমে তাকে সাহায্য করুন।
তার কথা মেনে চলুন
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? তিনি আপনাকে হালাল কিছু করতে বললে তা মানার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন।
ইসলামে স্বামীই পরিবারের কর্তা। স্ত্রী তার সহায়ক ও পরামর্শদাতা।
তিনি রেগে গেলে তাঁকে খুশী করার চেষ্টা করুন
তিনি রেগে যাবেন এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। কিন্তু একান্তই না পারলে তাঁকে এভাবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করুন,
ক. আপনার ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিন।
খ. উনার ভুল হলে আপনি তর্কাতর্কির বদলে নিজেই নতি স্বীকার করে বলুন, ‘আপনিই ঠিক বলেছেন’ অথবা আপনি ধৈর্যধরে তার রাগ পড়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করুন।
গ. তিনি ভিন্ন কোনো কারণে রাগান্বিত থাকলে তাঁর রাগ পড়ে যাওয়া পর্যন্ত চুপ থাকুন। কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? তাঁর রাগের জন্য অজুহাত খুঁজুন যেমন তিনি হয়তো ক্লান্ত, তাঁর কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, অথবা কেউ তাঁকে অপমানিত করেছে। আপনি খুব বেশী প্রশ্ন করতে যাবেন না বা কি ঘটেছে জানার জন্য পীড়াপীড়ি করবেন না যেমন,
-কি ঘটেছে আমাকে বলুন তো?
-এত রেগে আছেন কেন বলুন আমাকে।
-আপনি কিছু লুকাচ্ছেন, সেটা জানার অধিকার আমার আছে।
তাঁর অনুপস্থিতিতে সবদিকে খেয়াল রাখুন
যেকোনো হারাম সম্পর্ক থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।
পরিবারের গোপনীয়তা বজায় রাখুন। বিশেষ করে সহবাসের বিষয়টা। কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? এ ছাড়া আপনার স্বামী গোপন রাখতে চান এমন বিষয় কাউকে বলবেন না।
ঘর ও বাচ্চাদের যত্ন নিন।
তার অর্থ ও সম্পদের দেখভাল করুন।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? তার অনুমতি ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাবেন না। তিনি আপনাকে অনুমতি দিলে সম্পূর্ণ হিজাব পরে এরপর বের হবেন।
আপনার স্বামী পছন্দ করেন না এমন কাউকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেবেন না।
কোনো গায়রে-মাহরাম পুরুষের সাথে একাকী মিলিত হবেন না।
তাঁর অনুপস্থিতিতে এবং অবশ্যই তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন।
তাঁর বন্ধুদের ও পরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন
আপনার উচিত তাঁর অতিথিদের স্বাগত জানানো এবং তাদের খুশী করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে তাঁর বাবা-মাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবেন।
আপনি যতটা সম্ভব তাঁর আত্মীয়দের সাথে ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে চলবেন
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? তাঁকে কখনোই এমন অবস্থানে ফেলবেন না যেখানে তাঁকে তাঁর মা ও আপনার মাঝে কোনো একটাকে বেছে নিতে হয়।
তাঁর কোনো গেস্ট বাসায় আসলে তাদের সুন্দর জায়গায় বসতে দিন, সুন্দরভাবে রান্না করে খাওয়ান, গেস্টদের স্ত্রীদের স্বাগত জানান, ইত্যাদি।
তাঁকে তার আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে এবং তাদের আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে উৎসাহিত করুন।
তাঁর বাবা-মা ও বোনদের ফোন করুন, তাদের কাছে চিঠি পাঠান, তাদের জন্য উপহার কিনুন, বিপদে তাদের সহায়তা করুন।
প্রশংসনীয় ঈর্ষা
ঈর্ষা অনেক সময় স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শনের বহিঃপ্রকাশ। তবে একে ইসলামি শরিয়ার সীমারেখার ভেতর রাখতে হবে। অন্যের গিবত করা বা তাদের অসম্মান ইত্যাদি করা যাবে না।
অযথা সন্দেহ করা যাবে না।
ধৈর্য ও মানসিক সমর্থন
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? দারিদ্র্যতা, সংকট, দুর্যোগ ইত্যাদির মুখোমুখি হলে ধৈর্যধারণ করুন।
দাওয়াতে (কারাবাস, চাকরিচ্যুত, গ্রেফতার ইত্যাদি) কষ্টের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধরুন এবং তাকে আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করুন এবং তাকে জান্নাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিন।
তিনি আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করলে তার সাথে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করুন। এভাবে তাঁর খারাপ ব্যবহারের জবাব দিন।
আল্লাহর আনুগত্য, দাওয়াহ ও জিহাদে সহায়তা করুন
আপনার স্বামীকে আল্লাহর ইবাদতে সহযোগিতা করুন। তাকে বিভিন্ন ফরজ ও নফল ইবাদতের কথা স্মরণ করিয়ে দিন।
তাকে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উৎসাহিত করুন।
স্বামীর সাথে কুরআন শুনুন এবং তিলাওয়াত করুন। একাকী থাকলেও এটা করবেন।
ইসলামি বক্তৃতা ও হালাল হারামগুলো স্বামীর সাথে শুনুন। একাকীও শুনতে পারেন।
ব্যক্তিগতভাবে এবং আপনার স্বামীর সাথে ইসলামিক টেপ এবং অনুমোদিত নাশিদগুলি শুনুন।
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন। বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের আগে ও পরে। নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যার আমল করবেন।
নারী ও শিশুদের দাওয়াহ কার্যক্রমে অংশ নিন।
নারী সম্পর্কিত হুকুম-আহকাম, মাসায়েল ও আদব শিখে নিন।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? আপনার স্বামীকে তাঁর কাজে উৎসাহিত করুন, তাঁকে সুন্দর ও বিজ্ঞ পরামর্শ দিন। তাঁর কষ্ট লাঘব হয় এমন কথা তাঁকে বলুন।
স্বামীর সঙ্গ পাওয়া আপনার অধিকার। তবুও অধিকারের এই সময় থেকে কিছুটা ছাড় দিন যেন তিনি সেই সময়টা দাওয়াতের কাজে ব্যয় করতে পারেন।
তাঁকে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে উৎসাহিত করুন। তিনি যেন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তানাদির কথা ভেবে আল্লাহর রাস্তা থেকে ফিরে না আসেন এই ব্যাপারে তাঁকে সাহস যোগাবেন।
ঘরসংসার দেখাশোনা
ঘর পরিষ্কার রাখুন, সাজিয়েগুছিয়ে রাখুন।
ঘরের ডেকোরেশন দীর্ঘদিন একইরকম থাকলে একঘেয়ে লাগতে পারে। ফার্নিচারের পজিশন এদিক সেদিক করতে পারেন।
রান্নায় পারফেকশন অর্জনের চেষ্টা করুন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রস্তুত করুন।
ঘর পরিচালনায় যেসব দক্ষতা দরকার সেগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন, যেমন রান্নাবান্না।
কীভাবে সন্তানদের সঠিকভাবে ইসলামের ওপর বড় করতে হয় তা শিখে নিন।
অর্থসম্পদ ও পরিবারের হিফাজত
সাদাকা করতে হলেও বিনা অনুমতিতে তাঁর টাকা থেকে খরচ করবেন না। তবে যদি নিশ্চিত থাকেন যে উনি কিছু মনে করবেন না তাহলে করতে পারেন।
কীভাবে আপনার স্বামীকে খুশি করবেন? তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ করুন।
শিশুদের ভালো পোশাকআশাক পরান ও খাবার খেতে দিন। তাদের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখুন।
সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের গল্প বলুন।
পরিশেষে
স্বামীকে খুশি রাখা প্রত্যেক নেককার স্ত্রীর একান্ত কর্তব্য।আর স্বামীকে খুশি রাখার মধ্যেই সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই স্বামীকে তাঁর হক আদায়ে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। স্বামীর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ও আনুগত্য হয়ে স্বামীকে খুশি রাখার মাধ্যমে উত্তম স্ত্রী রুপে সাংসারিক জীবন কলহমুক্ত করা এবং সুখী সংসার গঠন করা সকল স্ত্রীর একান্ত দ্বায়িত্ব।
– idealmuslimah এর লেখা অবলম্বনে অনুবাদকৃত।