প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল আওয়ামী লীগ কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না বরং রক্ষা করে। তিনি বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য কয়েকটি দেশের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। অন্যদিকে সরকারের বারংবার আবেদন সত্ত্বেও কিছু দেশ খুনিদের ফেরত না দিয়ে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সারা দেশে বিভিন্ন কারাগারে ও ঢাকা সেনানিবাসের ফায়ারিং গ্রাউন্ড সশস্ত্র বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা ও সৈন্যদের হত্যা করার পাশাপাশি অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে গুম ও হত্যার সংস্কৃতির সূচনা করেছিল।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা এখনো তাঁদের কাছের এবং প্রিয়জনের লাশ পাননি উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি এখন কোন মুখে গুম-খুনের কথা বলছে।
প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এবং এই দিনে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘যারা সেই দিন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ডাক্তার, সাংবাদিকসহ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল, সেই নিজামী থেকে শুরু করে যাদের আমরা বিচার করেছি। বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। এদেরই তো খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এদেরই তো মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছিল জিয়াউর রহমান।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানানোর পর এরশাদ এসে আরও এক ধাপ ওপরে উপদেষ্টা অথবা প্রেসিডেনশিয়াল ক্যান্ডিডেটও বানাল, রাজনীতি করার সুযোগ দিল জাতির পিতার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে, সেই ফারুককে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার খুনি রশিদ ও ডালিম এখনো পাকিস্তানে পলাতক, খুনি রশিদ যে আমার সেজ ফুফুর বাড়িতে গিয়ে ৪ বছরের সুকান্ত থেকে শুরু করে আমার ফুফুকে গুলি করেছে, ফুফাকেও হত্যা করেছে, তিনজন ফুফাতো বোনকে হত্যা করেছে, ভাইকে হত্যা করেছে, সে এখন আমেরিকায়। বারবার তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি ওই আসামিকে আমাদের কাছে ফেরত দেন, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা দেয় না। কারণ, খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর মানবাধিকার রক্ষা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর মেজর নূর যে সরাসরি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিল, সেই নূর এখন কানাডায়। কানাডা সরকারকে বারবার অনুরোধ করি, তারা ফেরত দেয় না। খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমরা যারা আপনজন ও স্বজন হারিয়েছি, তাদের অপরাধটা কী? সেটা আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি। বিএনপি বা জামায়াত যারা এদের জন্য হাপিত্যেশ করে কান্নাকাটি করে, তারা এর জবাব দিক।
তিনি বলেন, শুধু এখানে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। কত মানুষকে গুম করেছে। আমার ছাত্রলীগের মাহফুজ বাবুর লাশ তো তার পরিবার পায়নি। নারায়ণগঞ্জের মনিরের লাশ তো পায়নি। যুবলীগ নেতা চট্টগ্রামের মৌলভি সৈয়দকে দিনের পর দিন অত্যাচার করে মেরেছে, ঠিক সেভাবে খসরুসহ আমাদের বহু নেতাকে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে। একেকজনকে অত্যাচার করে এমনভাবে ছেড়ে দিয়েছে, বেশি দিন তারা আর বাঁচতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘এই বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে একদম নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ তারা করেছে। এ দেশের স্বাধীনতা আমরা এনেছি। জাতির পিতা যদি স্বাধীনতা না আনতেন, তাহলে ওই মেজর জিয়া কি কোনো দিন মেজর জেনারেল হতে পারত বা তার পরিবার সেই স্ট্যাটাস ভোগ করতে পারত, পারত না। ওই মেজর থেকেই স্যালুট দিতে দিতে বুট ও পা ক্ষয় হয়ে শেষ হয়ে যেত।’
আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন।
আরও বক্তব্য দেল দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক শহীদ জায়া ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভাটি সঞ্চালনা করেন।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু জানে বেঁচে থাকাটাই তো মানবাধিকার নয়, আজকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছি। কেবল চাল উৎপাদন করেছি ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন, যেখানে বিএনপির সময় খাদ্যশস্য ছিল ১ কোটি ৬৯ হাজার মেট্রিক টন। পাশাপাশি গম, ভুট্টা সবই আমরা উৎপাদন করছি। মানুষকে আমরা বিনে পয়সাতেও খাবার দিচ্ছি, স্বল্প মূল্যে দিচ্ছি, অনেক উন্নত দেশও যেটা পারেনি, আমরা বিনে পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি, সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে বিনে পয়সায় ওষুধ দিচ্ছি। সারা দেশে পুল, ব্রিজ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে দেশকে সরাসরি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছি।’
তাঁর সরকার গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনা মূল্যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে উল্লেখ করে দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন, মুজিবের বাংলায় একজনও যেন গৃহহীন না থাকে, সে ব্যবস্থা তাঁর সরকার করবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের গণহত্যা এবং সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের শহীদ বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।