ডিয়ার সিস্টার্স আন্ড ব্রাদার্স, আল্লাহমুখী হোন। সমস্ত এক্সপেকটেশন শুধু আল্লাহর প্রতি রাখুন।
কারণ আপনার রিজিক, খাবার, জামা, সুস্থতা, সম্পদ, উত্তম নেককার স্বামী, নেককার সন্তান, বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি, সুন্দর সুখের সংসার, আপনার প্রতি আপনার স্বামীর ভালবাসা, যত্ন, আর্থিক সহায়তা, আপনার বাসস্থান, আপনার মনের শান্তি সব কিছু একদম সব কিছু আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে, আপনার স্বামী থেকে না, একটা সরষে দানা পরিমাণ কিছুই আপনার স্বামী থেকে আসে না। আসে আল্লাহর তরফ থেকে, যে মেয়ের জামাই নাই সেই মেয়েও একজন বিবাহিতা মেয়ের মত খাওয়াদাওয়া করছে, জামাকাপড় পরছে, বিছানা পেতে ঘুমাচ্ছে, হাসির কারণে হাসছে, দুঃখের কারণে কাঁদছে।
আল্লাহ আপনার তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন, আপনি দুয়া করে করে আল্লাহ থেকে যা আদায় করে নিতে পারছেন তাই আপনার পাওনা। তা-ই আপনার তাকদির, তা-ই আপনার পরীক্ষা, তা-ই আপনার নিয়ামাহ। স্বামী কিংবা অন্য কেউ শুধু মাত্র উসিলা, আপনার তাকদিরে যা আছে তা আপনা পর্যন্ত পৌঁছাতে।
আপনার স্ত্রীর আনুগত্য, আমানতদারিতা, একজন আবিদা, শাকিরা, সাবিরা স্ত্রী, স্ত্রীর দিল থেকে পাওয়া মুহব্বত, দেখতে সুন্দরী, কুররাতু আইয়ুন, একজন উত্তম স্ত্রী, উত্তম মা, পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন স্ত্রী যদি আল্লাহ আপনার তাকদিরে লিখে রাখেন তবেই আপনি এমন কাউকে পেতে পারেন।
যদি না পান তবে স্ত্রীর দোষ না, ওটা আপনার তাকদির, ওটা আপনার জন্য পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ হতে। স্ত্রীর কাছ থেকে যদি সুকুন না পান, খেদমত না পান, নম্র আচরণ না পান, স্ত্রী যদি মজার মজার রান্না না পারে তবে স্ত্রী হিসেবে তাকে দোষ দিবার আগে নিজের নাসিব নিয়ে ভাবা দরকার, কারণ খোদ স্ত্রীই আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য এসেছে, তার যাবতীয় গুণাবলী তো আর যৌতুক হিসেবে আসে নাই, ঐগুলোও আল্লাহর তরফ থেকেই এসেছে। আল্লাহ কেন আপনাকে এমন দিলেন? কেন পরীক্ষা দিলেন? আল্লাহ যদি নিয়ামাহ দিয়ে রাখেন তবে তা যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে, যদি পরীক্ষা দিয়ে রাখেন তবেও তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আমরা তাই-ই পাই যার যোগ্য বা আমরা ডিজার্ভ করি, আমরা তাই-ই পাই যা আমাদের জন্য উত্তম, কারণ আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী, আমরা তাই-ই পাই যা আমরা নিজেদের আমল দ্বারা কামাই করে নেই।
থার্ড পারসনের প্রভাবে কখনওই আমাদের কিছু হয় না। থার্ড পারসন একটা উসিলা মাত্র। সেই উসিলায় আল্লাহ আমাদের পাওনা পাইয়ে দেন। যেমন কেউ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল, কেউ ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা গেল, কেউ শ্বাস আটকে মারা গেল, এইযে জ্বর, ব্রেইন স্ট্রোক, শ্বাস আটকে আসা এগুলো মৃত্যু আসার উসিলা মাত্র, এখানে জ্বর, ব্রেইন স্ট্রোককে দোষ দিয়ে লাভ আছে?
যেসব মেয়েরা স্বামী দ্বারা পরীক্ষায় আছেন, আর যেসব ছেলেরা স্ত্রী দ্বারা পরীক্ষায় আছেন, পাশেপাশের মানুষজনের সুখশান্তি দেখে আফসুস না করে আল্লাহর কাছে নিজেদের উত্তমটা চান, কষ্ট থেকে পানাহ চান, বর্তমান কষ্টকর হালত সহজ করে দিতে বলেন, না হয় পরিবর্তন করে উত্তম কোনো বিনিময় দিতে বলেন।
একজন আরেকজনের প্রতি এমনভাবে নির্ভরশীল হয়ে পইড়েন না যে মনে হবে সে আমাকে ভুলে গেলে আমি খাব কী, আমি চলব কীভাবে! নির্ভরশীল আল্লাহর উপর হোন, রিজিক আল্লাহ দিবেন। কারও অবহেলায় যদি পথেঘাটে পড়ে থাকতে হয় তাও শোকর আদায় করেন, আল্লাহ এটাই আপনার নসিবে রেখেছেন।
আপনাদের আতংক দেখে মনে হয় আমরা দুনিয়ার জন্যই বাঁচি, আমাদেরকে দুনিয়াতে সুখি হতেই হবে। দুনিয়াতেই সব পাইতে হবে। পরিপূর্ণ হইতেই হবে। আমাদের জন্য মনে হয় জান্নাত নামক কিছুই নাই, নিয়ামাহতে ভরপুর কোনো কিছু আমাদের জন্য সাজানো হচ্ছে না। তাই আমরা পরীক্ষাবিহীন শান্তিপূর্ণ একটা জীবন চেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছি।
জামাই ছেড়ে চলে গেলে, বা আরেক বিয়া করলে শেষ আমার জিন্দেগী, দুনিয়াই আমার সব, আখিরাত বলতে কিছু নাই আমার জন্য, জান্নাত বলতে কিছু নাই আমার জন্য।
আল্লাহু আকবার, যেভাবে খাবলাইয়া আঁকড়াইয়া জামাইরে ধরে রাখেন রিজিকদাতা মনে করে, সেভাবে যদি আল্লাহকে ধরতে পারতেন, উনার উপর ফানা ফানা হয়ে তাওয়াককুল করতে পারতেন, তবে এই অন্তরে যে সুকুন আপনি অনুভব করতেন তা দুনিয়ার আর কোনো কিছুতে করতেন না। আল্লাহই আপনার জন্য যথেষ্ট এটাকে যদি গাঁইথা নিতে পারেন দিলে তাহলে আর কোনো কিছু হারানোর আর কাউকে নিজের কোনো কিছুর ভাগ দেওয়ার ভয় থাকত না।
যখন ফুঁৎকারে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি বলে উঠে বুক চাপড়াবেন তখন কই থাকবে আপনাদের এই শিং মাছের মত পিছলা জামাই? যারে হারানোর ভয় করেন ১৯ থেকে ২০ হলেই?
ইয়া নাফসি করার সময়টা বাস্তব সত্য, এখনই করেন ইয়া নাফসি। সমস্ত এক্সপেকটেশন শুধুমাত্র আল্লাহ থেকে করেন। শিরকি তাবিজ ব্যবহারের বিষয়ে একটা হাদিস আছে, যে কেউ যখন কোনো কিছুকে নিজের হেফাজতকারী মনে করে তখন আল্লাহ তাকে সেই বস্তুর উপর সোপর্দ করে দেন। অর্থাৎ আল্লাহকে হেফাজতকারী হিসেবে মানলে আল্লাহ উনার পক্ষ থেকে হিফাজত করতেন। আর যে বস্তুর উপর(শিরকি তাবিজ) আমি আস্থা রাখছি যে এটা আমাকে হিফাজত করবে তবে এই বস্তুতে যতটুক ক্ষমতা আছে আমাকে হিফাজত
করার আমি ততটুক পাব। এখন আমরা ভাল করেই জানি এমন শিরকি তাবিজে কতটুক ক্ষমতা থাকে আর সেটা আমাদের জন্য কতটুক মঙ্গলজনক হয়।
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে অফুরন্ত পাবেন। আর জামাইর উপর করলে পাবেন তার ইনকাম আর মানসিকতা যত্তুক, ততটুক।
লিখেছেনঃ মুহতারামা যাইনাব আল গাযী।