করোনাকালে আমরা প্রযুক্তির অনেক অজানা বিষয় নিয়ে বিশদভাবে জানতে পেরেছি। মহামারী একদিকে যেমন আমাদের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিয়েছে তেমনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ইন্টারনেট দুনিয়ার অনেক কিছুর সাথে। তাই শারীরিক ভাবে উপস্থিত থেকে অনেক কাজ আমরা করতে না পারলেও ভার্চুয়ালি সেগুলো করে ফেলতে পারি এবং তা খুব সহজেই। মাউসের একটি ক্লিকেই।
‘ওয়েবিনার’ এই ট্রামটির সাথে আমরা সবাই এখন কমবেশি পরিচিত । অনেক আগের উদ্ভাবিত একটি মাধ্যম হলেও মহামারী কালে আমরা সবচেয়ে বেশি এটি সাথে পরিচিত হয়েছি এবং সেবা গ্রহণ করছি। ওয়েবিনার শব্দটি মূলত ‘ওয়েব ‘ এবং ‘সেমিনার’ এই দুই শব্দের মিলিত রূপ। ওয়েব এর মাধ্যমে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় তাকেই ওয়েবিনার বলা হয়ে থাকে। ওয়েব কনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্স, ওয়েব কাস্ট, অনলাইন সেমিনার ইত্যাদি নামেও এটি পরিচিত। এটি একটি ভার্চুয়াল ইভেন্ট যা বিভিন্ন স্থানে থাকা পার্টিসিপ্যান্ট অথবা প্রেজেন্টরদের কানেন্ট করে ইন্টারনেট বেসড্ সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। যেকোনো ইন্টারেক্টিভ সেশন, লাইভ ডিসকাশন, গ্লোবাল কনফারেন্স ওয়েবিনার এর মাধ্যমে সহজেই আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই পুরো ভার্চুয়াল ওয়েবিনার রেকর্ড ও করা যায় এবং লাইভ ইভেন্ট এর পর তা সবার কাছে পৌঁছে দেয়া যায় বা সংরক্ষণ করা যায়।
যেকোনো ধরনের ওয়েবিনার সংঘটিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ‘ওয়েবিনার সফটওয়্যার’ এর । একটি ইফেক্টিভ ওয়েবিনার হোস্টিং এর জন্য প্রয়োজন একটি ভালো, ইউজার ফেন্ডলি, ইজিগোয়িং সফট্ওয়ার এর। এরকম কিছু সফট্ওয়ার হলো Livestorm, Demio, Webinar Jam, GoToWebinar, Zoom, Adobe Connect, ClickMeeting, Google Hangouts, Webex, DaCast, BigMarket ইত্যাদি। আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত Zoom এর সাথে। এছাড়াও অফিসিয়াল অথবা ইন্টারন্যাশনাল কোনো ইভেন্ট হলে Demio, Livestorm, ClickMeeting, BigMarket এই প্লাটফর্ম গুলো বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার ব্রাউজার বেসড্ ওয়েবিনারও হয় যেটাতে সফটওয়্যার ইন্সটল করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ইন্টারনেট অ্যাকসেস থাকলেই সম্ভব। ClickMeeting এরকম সেবা দিয়ে থাকে। এই সফটওয়্যার এর Call in ফাংশন আছে যার ফলে ইউজার ওয়েবিনার এ শুধুমাত্র ফোনের অডিও দিয়েই অ্যাটেন্ড করতে পারে।
কোন ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই যেসব হার্ডওয়্যার লাগে তা হলো ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, হেডফোন।
প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন-
- লাইভ ওয়েবিনার- রিয়েল টাইমে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনার। একটি নির্দিষ্ট টাইমে হয় এবং পার্টিসিপ্যান্ট রা ইন্টারেক্টিভ কনভারসেশন করে থাকে হোস্টের সাথে।
- অন ডিমান্ড ওয়েবিনার- এটি মূলত আগেই রেকর্ডেড করা থাকে এবং অ্যাটেন্ডিস যারা তারা যেকোন সময় সুবিধামত দেখতে পারে অ্যাকসেস নিয়ে।
- অটোমেটেড ওয়েবিনার- এই ওয়েবিনারও প্রি রেকর্ডেড কিন্তু এটি প্রচারিত করা হয় স্পেসিফিক কোন টাইমে যেটা ওয়েবিনার হোস্টকে শারীরিকভাবে উপস্থিত না হয়েও লাইভ প্রেজেন্টেশন ডেলিভারিতে সাহায্য করে থাকে।
- অনলাইন মিটিং – অনলাইন মিটিং মূলত একটি লাইভ গেট টুগেদার যেখানে কো ওয়ার্কার/ স্টুডেন্ট / ট্রেইনিজ / কলিগ সবাই কমিউনিকেট এবং কলাবোরেট করতে পারে রিয়েল টাইমে।
অধিকাংশ ওয়েবিনারই ‘ ওপেন টু অল ‘ হয়ে থাকে। কোনো ফি লাগে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইমেইল অ্যাড্রেস লাগে অ্যাকসেস এর জন্য। আবার কিছু ওয়েবিনার হয়ে থাকে পাসওয়ার্ড প্রটেকটেড। এটি শুধুমাত্র যাদের জন্য আয়োজিত তারাই অ্যাকসেস নিতে পারে। আরেক ধরনের ওয়েবিনার হলো টোকেন প্রটেক্টেড এখানে প্রত্যেকের ইউনিক কোড থাকে এবং সেটি ব্যবহার করেই অ্যাকসেস নিতে পারে।
সাধারণত একটি ওয়েবিনার এ চার ধরনের ইউজার থাকে।
১. হোস্ট – হোস্ট হলো অরগানাইজার, অ্যাকাউন্ট ওনার। হোস্টের সব ধরনের ফিচার এই অ্যাকসেস থাকে।
২. মাল্টিইউজার- হোস্ট মাল্টিইউজার অ্যাসাইন করে থাকে।
৩. প্রেজেন্টর- ওয়েবিনার এর অ্যাকসেস লিংক পেয়ে থাকে এবং যেকোন কিছুর প্রেজেন্টেশন দিয়ে থাকে ইভেন্ট রিলেটেড।
৪. অ্যাটেন্ডডিস- অ্যাটেন্ডডিস মূলত অডিয়েন্স, ভিউয়ার এর রোলে থাকে। তারা শুধু দেখতে এবং শুনতে পারে। আবার সেটিং এনেবেল্ড অনুসারে তারা ক্যামেরা অন / অফ, স্ক্রিন শেয়ার এগুলোও করতে পারে।
একটি ওয়েবিনার এ কতজন অ্যাটেন্ট করতে পারবে তা সফটওয়্যার বেসড্ আলাদা আলাদা হতে পারে। Zoom প্লাটফর্মে প্রায় ৫০০ জন একি সাথে অ্যাকোমোডেড করা যায়। আবার BigMarket প্লাটফর্মে ২৫ জন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০,০০০ জন অ্যাটেন্ড করতে পারে। অ্যাভারেজ একটি ওয়েবিনার ৪৫ মিনিট হয়ে থাকে তবে প্রয়োজন অনুসারে সময় আরো বেশি বা কম ও হতে পারে।
ওয়েবিনার সেবার মাধ্যমে আসলে অনেক সুবিধা আমরা পেয়ে থাকি। ঘরে বসেই দূর দুরান্তের সব প্রয়োজনীয় মিটিং, সেমিনার, কন্ফারেন্স এ অংশগ্রহন করতে পারছি। যা কোস্ট এবং টাইম সেভিং করছে। এটি খুবই সাধারণ এবং অটোমেটেড রেজিষ্ট্রেশন প্রকিয়া। এছাড়াও ওয়েবিনার চলাকালেই খুব সহজেই যেকোন ধরনের ইনফো এক্সচেঞ্জ করা যায়, ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং করা যায়।