বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া দাহ্য পদার্থে দগ্ধ শিশুসহ একই পরিবারের তিন সদস্য বর্তমানে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাঁদের করুণ পরিণতি দেখে ভেঙে পড়েছেন শিশুটির বাবা সাগর কর্মকার। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় ছটফট করছে অবুঝ শিশু। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আমার স্ত্রী ও মা। তিনজনের শরীর দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন, অ্যাসিডে তিনজনের শরীর দগ্ধ হয়েছে।’
‘দগ্ধ তুলতুলে শরীর নিয়ে চার দিন ধরে অবিরাম যন্ত্রণায় ছটফট করছে তিন মাস বয়সী অবুঝ শিশু সূর্য। বাবা হয়ে এ দৃশ্য আর সহ্য করতে পারছি না। নিষ্পাপ শিশুর কী অপরাধ ছিল? কেন তাকে এভাবে ঝলসে দেওয়া হলো? ওর যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না, বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দগ্ধ শিশু সূর্যের বাবা সাগর কর্মকার এসব কথা বলেন।
সাগর কর্মকার আরও বলেন, ‘গ্রামে কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই, বিরোধ নেই। কারা, কেন এভাবে অ্যাসিড নিক্ষেপ করল, বুঝতেও পারছি না। আমার স্ত্রী-সন্তান এবং মাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এভাবে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নের তেলিহাটা কর্মকার পাড়ায় এই দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়েছেন তেলিহাটা কর্মকার পাড়ার দুলাল কর্মকারের স্ত্রী দীপালি রানী কর্মকার (৪৫), তাঁর পুত্রবধূ বীণা রানী কর্মকার (২৪) ও বীণা রানী কর্মকারের তিন মাসের শিশুসন্তান সূর্য কর্মকার। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে তাঁদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় রোববার গাবতলী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন সাগর কর্মকারের বাবা দুলাল কর্মকার।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, তিন মাসের শিশুসহ ঘুমন্ত তিনজনকে লক্ষ্য করে ঘরের জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে দগ্ধের ঘটনায় পুলিশ অ্যাসিড নিক্ষেপের ধারায় মামলা নেয়নি। মামলা রেকর্ড করা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারায়।
এ বিষয়ে বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাদী এজাহারে অ্যাসিড নিক্ষেপের কথা উল্লেখ করেননি। দুর্বৃত্তদের ছোড়া দাহ্য পদার্থে একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন নারী-শিশু দগ্ধ হয়েছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। এ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও দাহ্য পদার্থ দিয়ে সংঘটিত অপরাধ আমলে নিয়ে প্রযোজ্য ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, শিশুটির গোটা মুখ ও কণ্ঠনালি ঝলসে গেছে। সব মিলিয়ে শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা বেশি গুরুতর হওয়ায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। শিশুটির মা বীণা রানী কর্মকারের শরীরের ২ শতাংশ ও দাদি দীপালি রানী কর্মকারের শরীরের ৪ শতাংশ অংশ পুড়ে গেছে।