বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেল। আজ বুধবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ এবং মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল, ২ জন স্বতন্ত্রসহ মোট ৪৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুটি প্যানেলেই বিভিন্ন পদে ঢালিউডের তারকা অভিনয়শিল্পীরা আছেন। এ কারণে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে লড়াই জমে উঠবে।
আজ সকাল থেকেই দুই প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা বিএফডিসিতে জড়ো হতে থাকেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) শিল্পী সমিতির অফিসের সামনে অবস্থান নেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের লোকজন। অন্যদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি ও প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা। নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে যায় এফডিসির মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স হয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও ক্যানটিন চত্বরে।
দুই প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকের মধ্যেই ছিল দারুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনা। প্রযোজক সমিতির অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদ প্রার্থী নানা শাহ বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে বেশি আনন্দ–উল্লাস হবে। নির্বাচনকে ঘিরে বেশ উত্তেজনাও থাকবে। আজসহ গত কয়েক দিনের অবস্থা দেখে তাই মনে হচ্ছে।’
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে মনে করছেন, এবারের নির্বাচন অন্য যেকোনোবারের থেকে আলাদা হবে। বিদায়ী কমিটির মিশা-জায়েদ প্যানেল চাইছে আবার ক্ষমতায় বসতে, ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে পরিবর্তন আনতে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসের সামনে দেখা হলো সভাপতি প্রার্থী মিশা সওদাগরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা বিগত দিন ভালো কাজ করেছেন বা ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রের জন্য ভালো কাজ করতে পারবেন, তাদেরই ভোটাররা ভোট দেবেন। আমার বিশ্বাস, এবারের নির্বাচনটা খুব ভালো ও সুন্দরভাবে হবে।’
ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এই প্যানেলের প্রার্থীরা প্রযোজক সমিতির সামনে থেকে দল বেঁধে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ বলেন, ‘আমাদের প্যানেল ভালোভাবে সাজিয়েছি। বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আমরা বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রের এই মন্দা অবস্থা কাটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্রের সব সংগঠনকে এক ছাতার তলে এনে কাজ করার চেষ্টা করব।’
২৮ জানুয়ারি এফডিসিতে দিনভর অনুষ্ঠিত হবে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন।
মিশা-জায়েদ প্যানেল ব্যান্ড বাজিয়ে বিকেল পাঁচটার পরে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। মিশা সওদাগর বলেন, ‘এবার দুটি প্যানেলেই ভারসাম্য আছে। কাঞ্চন ভাইয়ের মতো একজন সম্মানিত মানুষ সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। তা ছাড়া আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকে আমার কাছের মানুষ। যে প্যানেলেই নির্বাচন করি না কেন, দিনশেষে আমরা শিল্পী। ফলাফল যাই হোক, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব, এটাই বড় কথা।’
নির্বাচন কমিশনের অন্যতম সদস্য জাহিদ হাসান জানান, ১৩ জানুয়ারি প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ জানুয়ারি।
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী এবার মোট ৪২৮ জন ভোটার নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
দুই প্যানেলে প্রার্থী হয়েছেন যাঁরা—
ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ
সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ, সহসভাপতি রিয়াজ ও ডি এ তায়েব, সহ–সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনূর, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নিরব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক আরমান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমন, কোষাধ্যক্ষ আজাদ খান। কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য অমিত হাসান, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, সাংকো পাঞ্জা, জেসমিন, কেয়া, পরীমনি, গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত।
মিশা সওদাগর-জায়েদ খান
সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, সহ–সাধারণ সম্পাদক সুব্রত, সাংগঠনিক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ। কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীর।