অনেক জল্পনা কল্পনার পর দেশব্যাপী সমালোচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ’র দায়িত্ব গ্রহণের মেয়াদ শেষ প্রান্তে। গত ১লা জুন উপাচার্য নিয়োগকৃত সময় পেরিয়ে গেছে এবং আগামী ১৩ই জুন দায়িত্ব গ্রহণের মেয়াদও শেষ হবে।
এর মধ্যেই গত ০৯ই জুন বেরোবির নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. মোঃ হাসিবুর রশিদ। নিয়োগপত্র দেখে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে এক নতুন উত্তেজনা। বর্তমান উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ’র নামে রয়েছে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার ও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন উপাচার্য নিয়োগের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেরই হাজারো অভিনন্দন জমা পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। শুধুমাত্র অভিনন্দনই নয় বরং অধিকাংশদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস এ ফুটে ওঠে অনেক হতাশার গল্প। অনেকেই আবার দেখছেন নতুন স্বপ্ন।
এদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিমুক্ত ও লেখাপড়ার সুষ্ঠ পরিবেশের প্রত্যাশায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাদের স্ট্যাটাস দেখে বোঝা যায় যে, নতুন উপাচার্য এসে ক্যাম্পাসে সারাক্ষন অবস্থান করবেন ও শিক্ষার্থীবান্ধব হবেন এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশসহ শিক্ষার্থীদের সম্ভবপর আবাসিক বাসস্থান ও নিশ্চিত করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, আমরা আশা করি নবনিযুক্ত উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের সেশন জট নিরসনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন। এক্ষেত্রে সকল বিভাগের একাডেমিক ক্যালেন্ডার নিশ্চিত করতে হবে যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা ও সিলেবাস সংক্রান্ত সকল বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে।
নব্য প্রতিষ্ঠিত স্টুডেন্ট রাইটস ফোরাম, বেরোবির সাধারণ সম্পাদক বাইজীদ আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘ ১ যুগের পথ চলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পদ, প্রমোশন আর আর্থিক সুবিধা লাভের দৌড়াত্বে শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর কিছুই হয় নি। নবনিযুক্ত উপাচার্য যদি সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে এই ভার্সিটিতে জয়েন করেন তবে আমি মনে করি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন সম্ভব। সর্বোপরি ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে সবাইকে এখন সামগ্রিক স্বার্থে সেশনজট নিরসন, অবকাঠামোর উন্নয়ন সহ গবেষণা কার্যক্রমের দিকেই নজর দিতে হবে বলে আমি মনে করি।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন মাহমুদ বলেন, উপাচার্য মহোদয়ের মেয়াদ শেষ,নতুন উপাচার্য মহোদয় এসেছেন।চলছে আলোচনা,ঘনীভূত হচ্ছে নানারকম প্রত্যাশার বরফ।প্রত্যাশার অন্তরালে একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়, হতাশা কি কাটবে শিক্ষার্থীদের?
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য আসেন- উপাচার্য যান, হতাশার দুষ্টচক্র কে বা বের করতে পারেন! শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যতজন এসেছেন সকলেই বিতর্কিত! কেউ পিছন গেট দিয়ে বেড়িয়ে যান, কেউবা বেড়িয়ে যান সামনগেট দিয়েই তবে সকলেই বিতর্ক কুড়িয়ে যান! একরাতের নিয়োগ কিংবা জেলে থাকা একমাত্র উপাচার্যের গল্পও শুনা যায় প্রসঙ্গে-অপ্রসঙ্গে। কেউ কেউ এতটাই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন যে, ওনার মেয়াদ শেষ কবে সেটি নিয়েও চলে বিতর্ক!যাক সেসব!
শিক্ষার্থীদের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে করোনার থাবা, বেড়েছে সেশনজট। চোখের কোণে জমে গেছে অদৃশ্য আঁধার। আঁধার কাটিয়ে ভোর আসতে আর কত দেরী? যখনই এই প্রশ্নটি সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনই উপাচার্য মহোদয়ের পালাবদল। তবে কি আলোর ঝাণ্ডা হাতে পথ দেখাতে এগিয়ে এলেন নতুন উপাচার্য মহোদয়?
উত্তর হয়তো সহসাই পাওয়া যাবে না। উত্তরের জন্য আমরা অপেক্ষা করবো, চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকবো। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলে দীর্ঘশ্বাসের শরীর আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা হতাশার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে চাই। আমরা আশাবাদী, বেরোবিয়ানরা তো আশাতেই বাঁচে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ শিক্ষকের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবাহক ড. মতিউর রহমান বলেন, নতুন উপাচার্য হিসেবে আমরা মাননীয় ড. মোঃ হাসিবুর রশিদকে স্বাগত জানাই। কলিমুল্লাহ ও তার দোসররা যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অতলে ডুবিয়ে দিয়েছেন সেখান আশাকরি সেখান থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালকে তুলে আনবেন এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর মোঃ গোলাম রব্বানী বলেন, আমি কিছুদিন থেকে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করছি। নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. মোঃ হাসিবুর রশিদ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সুবাদেই তার সাথে আমার যতটুকু কথা হয়েছে বা তাকে চিনেছি তাতে মনে হয়েছে যে তিনি আইনি পন্থায় যথেষ্ট সোচ্চার এবং তিনি বেশ শিক্ষার্থীবান্ধব ও বটে। আমি আশা করি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর একাডেমিক সেশনজট সহ সব ধরনের সমস্যা সমাধান করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।
শিক্ষার্থীর সমস্যা, উত্তরণ ও সম্ভাবনা সংশ্লিষ্ট তথ্য জানতে নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. মোঃ হাসিবুর রশিদকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।