উম্মে সালামাহ (রা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ (রা.) নামক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তিনি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বদর, উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। এরপরে তিনি ফিরে আসেন, আহত অবস্থায়। এরপরে তিনি আঘাতের কাছে হার মেনে যান যার ফলে উম্মে সালামাহ (রা.) বিধবা হন। তাদের মধ্যে চমৎকার সামঞ্জস্য বিদ্যমান ছিল। উম্মু সালামাহ বলেনঃ “আবু সালামাহ এর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে?” তাকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানাদি আহে, আমি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি যার কারণে আমি বিয়ে করতে পারব না।’ তাছাড়া তার স্বামী তার এতটাই যত্ন নিতেন যে তিনি চিন্তিত ছিলেন যে এরকম যত্ন আর কেউই তার নিতে পারবেনা। তিনি বিয়ে করলে হয়ত পূর্বের স্বামীর সাথে তুলনা দেবেন এবং বর্তমান স্বামীকে হয়ত এমন কিছু বলে ফেলবেন যা তাকে অখুশি করবে।
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তিনি ফিরিয়ে দেন। উমর ইবন আল খাত্তাম (রা.) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তিনি এটাও ফিরিয়ে দেন। চিন্তা করুন কাদের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপরে চতুর্থ হিজরীতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। উম্মে সালামাকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রস্তাব দেয়ার পরে উম্মে সালামা প্রস্তাব গ্রহণে দ্বিধা প্রকাশ করেন নিচের তিনটি কারণ দেখিয়েঃ
- উম্মে সালামার বয়স অনেক
- তার নিজের ছেলেমেয়েরা আছে
- তিনি মুহাম্মাদের অন্যান্য স্ত্রীদের উপস্থিতিতে হিংসা বোধ করতে পারেন।
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো খন্ডন করেন এভাবে:
- মুহাম্মাদের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বয়স উম্মে সালামার চেয়ে বেশি
- বিয়ে হলে উম্মেসালামার পরিবারের সদস্যেরা মুহাম্মদেরও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)পরিবারের সদস্য।
- হিংসা কমার জন্য মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবেন।
তিনি সম্মতি জানান এবং উভয়ের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
উম্মে সালামাহ নামে পরিচিত হবার বদলে তিনি পরিচিত হন উম্মুল মুমিনিন নামে। তিনি উম্মে সালামাহ নামে পরিচিত হলেও সেটা তার নাম ছিল না। তার এক সন্তান ছিল সালামাহ নামে। এজন্য তিনি সালামাহ এর মা অর্থাৎ উম্মে সালামাহ (রা.) নামে পরিচিত ছিলেন। তার প্রকৃত নাম হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়াহ। তিনি কুরাইশ গোত্রের বনি মাখযুম গোত্রের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আসাদ (রা.) কে বিয়ে করেন এবং বর্ণিত আছে তারা ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম দশজন মানুষের অন্তর্ভুক্ত। তারা দুজনেই একসাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ পরপরেই কুরাইশ গোত্র তাদের পিছে লেগে যায়। তারা তাদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত করতে থাকে, তাই যখন আফ্রিকায় হিজরত শুরু হয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকেও হিজরতের অনুমতি দেন। তারা আন-নাজ্জাশির শাসনে শান্তিতেই সেখানে বসবাস করেন তবে তারা মক্কার অনুপস্থিতি সবসময় অনুভব করতেন।
তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবিদের সঙ্গকে মিস করছিলেন। তারা আরো শিখতে চাইছিলেন দ্বীন সম্পর্কে। ইসলামের উন্নতির ধারায় তারাও যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। যখন হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব (রা.) ও উমর ইবন আল খাত্তাব (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন তখন আফ্রিকায় খবর চলে যায় যে পুরো মক্কায় ইসলামের শাসন কায়েম হয়ে গেছে, সেখানের পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক। তখন মানুষেরা বলাবলি শুরু করল যে তাহলে আবার মক্কায় ফিরে যাওয়া যাক। তারা এরপরে মক্কায় ফিরে এলেন। কিন্তু এই খবরটা গুজব ছিল। সেখানে আবার কাফিররা অত্যাচার করা শুরু করল। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবিদের মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরতের অনুমতি দেন। যারা হিজরত করেছিল তাদের মধ্যে প্রথম দিককার ছিলেন আবু সালামাহ, উম্মে সালামাহ এবং তাদের সন্তান সালামাহ (রা.)।
যদি তাদের পরিবারের ইতিহাসের দিকে নজর দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে তাদেরকে সবাই অত্যন্ত ভালোবাসত। মানুষ তাদের দুজনের ভালোবাসাকে উদাহরণ হিসেবে অন্যদের সামনে উপস্থাপন করত। এখানে ভালোবাসা বলতে স্ত্রীর প্রতি যত্নকে বোঝানো হচ্ছে। আবু সালামাহ বললেনঃ ‘আমার স্ত্রীর জন্য উট প্রস্তুত করা দরকার।’ তারা উটে চড়ে মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু এসময় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। যখন তারা বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন বনু মাখযুম গোত্রের কিছু মানুষ উম্মে সালামাহকে বের হতে দেখে। তারা তাদের কাছে ছুটে গেল এবং তাদের থামাল। তারা বললঃ ‘আমরা চাইনা তোমরা চলে যাও।’ আবু সালামাহ (রা.) তাদের বললেনঃ ‘আমাকে থামানোর কোন অধিকার তোমাদের নেই।’ তারা বললঃ ‘কিন্তু উম্মে সালামাহ আমাদের গোত্রের মেয়ে। আমরা কখনই তাকে আপনার সাথে যেতে দিবনা।’ উম্মে সালামাহ বললেন, ‘কিন্তু আমি তো তার সাথে যেতে চাই।’ তারা অনুমতি দিল না। তারা তাকে ধরে ছেঁচড়ে নিয়ে চলে গেল। আবু সালামাহ শুধুই তাকিয়ে দেখলেন অসহায় অবস্থায় কারণ তিনি একাই ছিলেন আর অপর পাশে একদল মানুষ। বনি আব্দুল আসাদ গোত্র (আবু সালামাহর গোত্র) দেখল তার সন্তান বনু মাখযুমের সাথে তার মায়ের সাথেই চলে যাচ্ছে। তারা বললঃ ‘এই সন্তান তো আমাদের। কারণ তার বাবা আমাদের গোত্রের। আমরা তাকে নিয়ে নিব।’ বনু মাখযুম গোত্র এটার প্রতিবাদ করল না। তারা বললঃ ‘ঠিক আছে। নিয়ে যাও।’
অন্যদিকে উম্মে সালামাহ (রা.) তার সন্তানের জন্য কাঁদছিলেন। তিনি তার সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছিলেন না যেভাবে তাকে তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি বললেন, ‘ আমার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর আমাকে আমার সন্তান থেকেও বিচ্ছিন্ন করতে চাও? আবার তো কেবল সেই আছে।’ তারা তার কথা শুনল না। তিনজন তিনদিকে আলাদা হয়ে গেল। স্বামীর কোন বিকল্প ছিল না। তিনি মদিনা আল-মুনাওয়ারাতে চলে গেলেন। উম্মে সালামাহ থাকলেন বনি মাখযুমের সাথে। আর শিশু সালামাহ গেল বনি আব্দুল আসাদের সাথে।
তিনি বলেন, ‘আমি কাঁদতাম আর আল্লাহর কাছে দুয়া করতাম। যে জায়গায় আমাদের আলাদা করা হয়েছে সেখানে আমি চলে যেতাম প্রতিদিন আর কেঁদে কেঁদে প্রতিদিন সেই ঘটনায় পুনরাবৃত্তি কল্পনার চোখে দেখতাম।’
তিনি ঠিকমত খেতে পারতেন না, চিন্তা করতে পারতেন না। দিন যায়,
মাস যায়, বছর যায় আর তার অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে। একদিন আমার আত্মীয়দের পক্ষ থেকে একজন মানুষ এল আমাকে দেখতে, তিনি আমার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন তাই তিনি পরিবারের সাথে শক্তভাবে কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘দেখো তোমরা এই মিসকিন নারীকে ধরে রেখো না। তাকে তার স্বামীর সাথে যোগ দিতে দাও। সে তোমাদের কি করেছে?’ তিনি এভাবে কথা বললেন এবং তাদের বুঝাতে সক্ষম হলেন। তিনি কথাগুলো শুনে স্পর্শকাতর হয়ে পড়লেন এবং বললেনঃ ‘আমি তো আমার সন্তানকে এখানে ফেলে রেখে যেতে পারি না। তার বয়স প্রায় এক বছর। আমি আমার স্বামীর কাছে যাব অথচ আমার কলিজার টুকরো সন্তান এখানে থেকে যাবে!’
তাই কিছু সময় বনি আব্দুল-আসাদ গোত্রের সাথে কেউ দেখা করে আলোচনা করল এবং তাদেরকেও বুঝাতে সক্ষম হল যেন তারা ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। যখন ছেলেটি মুক্তি পেল তখন তিনি যেন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী নারীতে পরিণত হলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ তার উটকে প্রস্তুত করলেন ভালমত খাইয়ে, প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসও জোগাড় করলেন। এরপরে তিনি উটে চড়ে বসলেন মদিনার উদ্দেশ্যে। তার সাথে কেউ ছিল না। মক্কা থেকে মদিনা প্রায় ১৬ দিনের যাত্রা পথ, তাছাড়া সেখানে ডাকাতদের দ্বারাও ছিনতাই হবার ভয় ছিল। এই পথ ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল কিন্তু তিনি একাই চলে গেলেন। তিনি মক্কা-মুকাররামাহ ত্যাগ করলেন উট এবং তার সন্তানকে নিয়ে। তাদের পথচলা শুরু হল। তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করেন যেন আল্লাহ তার হিজরত কবুল করে নেন এবং তাকে নিরাপত্তা দান করেন।
উসমান ইবনে তালহা (রা.) এর পরিবার কাবাঘরের চাবি সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিল। তিনি উম্মে সালামাহ (রা.) কে দেখে চিনতে পারলেন। তাকে দেখেই তার কিছু একটা মনে পড়ল। উম্মে সালামাহ (রা.) এর বাবা পরিচিত ছিলেন যাদ আর-রকিব নামে। যখন ভ্রমণকারীরা উম্মে সালামাহর বাবার (তার নাম ছিল আবু উমাইয়াহ ইবনে আল-মুগীরাহ) বাসায় আসত তখন তাদের সাথে কোন রিজিক থাকত না, কারণ তিনিই তাদের দান করতেন। তার কাছে কেউ গেলে তার কিছুর প্রয়োজন হবে না, বরং তাকেই প্রয়োজনীয় জিনিস দেয়া হবে। উসমানের (রা.) এটা মনে পড়ল তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘হে যাদ আর-রকিবের কন্যা, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ তিনি জবাব দিলেনঃ ‘আমি মদিনায় যাচ্ছি।’ উসমান (রা.) বললেনঃ ‘আপনি একা যেতে পারেন না। আমি আপনাকে নিয়ে যাব।’
এবার তাদের যাত্রা শুরু হল। উসমান (রা.) তাকে সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে দেখাশোনা করতে লাগলেন। তার ব্যাপারে তিনি বলেনঃ ‘ওয়াল্লাহি! যেভাবে তিনি আমাকে উটে চড়তে এবং নামতে সাহায্য করেছেন, খাবার এবং অন্যান্য বিষয়াদির ব্যবস্থা করেছেন এবং যতটা শালিনতা তিনি প্রদর্শন করেন তার দৃষ্টান্ত আমি আর কোনদিনও দেখতে পাব না।’ উসমান ইবনে তালহা (রা.) এমন একজনের দেখাশোনা করেন যিনি পরবর্তীতে উম্মুল মুমিনীন হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কিভাবে উম্মুল মুমিনীন হলেন?
উসমান ইবনে তালহা (রা.) কুবায় পৌঁছে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে তাকে বলেন, ‘আপনার স্বামী এ এলাকাতেই রয়েছেন। আমি আপনাকে এখানেই ছেড়ে দিচ্ছি। আপনি এখন নিরাপদে প্রবেশ করতে পারেন।’
তিনি প্রবেশ করলেন তার সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সাথে পুনরায় মিলিত হবার জন্য। পরবর্তীতে তার গর্ভে আরো কয়েকজন সন্তান জন্ম নিয়েছিল। উমর নামে একজন পুত্র ও দুররাহ ও যয়নব নামে দুজন কন্যা জন্মেছিল। যাইহোক, এরপরে তাদের জীবনকে সুখেই কাটতে থাকে। কিন্তু এরপরেই আবু সালামাহ (রা.) মারা যান এবং তিনি বিধবা হন।
আবু সালামাহ (রা.) এর মৃত্যুশয্যায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে যান এবং তিনি দুয়া করেন। তিনি তার পরিবারের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তার সন্তান এবং বিধবা স্ত্রীর ব্যাপারটিও তাকে উদ্বিগ্ন করেছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি দুয়া শিখিয়ে দেন, ‘হে আল্লাহ! আমার কষ্টদায়ক সময়ে সাহায্য করুন এবং উত্তম কিছু দ্বারা একে প্রতিস্থাপিত করুন।’ তিনি দুয়াটি করেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু তার স্ত্রী বিয়ে ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান। তিনি আয়্যিম আল-আরব অর্থাৎ আরবের বিধবা নামেও পরিচিত হন। এটা লজ্জাজনক বিষয় ছিল কারণ প্রথা অনুযায়ী আরবরা কোন বিধবাকেই স্বামীবিহীন রাখত না। তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিত যেন কেউ তার এবং তার সন্তানের দেখাশোনা করতে পারে।
এর পরবর্তীতে তার সাথে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিয়ে হয় এবং তারা সুন্দর জীবনযাপন করেন। তার সন্তান্দেরকে কেউ দেখলেই বুঝে যেত এটি উম্মে সালামাহ (রা.) এরই সন্তান। কারণ তার সন্তানেরা উত্তম চরিত্র ও গুণের অধিকারী ছিল এবং উত্তম রূপেই তাদের যত্ন নেয়া হত।
হুদায়বিয়ার সময় তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথেই গিয়েছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের সাথে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। তারা এখানে উমরাহ করতে এসেছিলেন এবং তাদের সাথে আনা পশুদের জবাই করতে চাইছিলেন। কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘যেহেতু আমরা এখানে উমরাহর উদ্দেশ্যেই এসেছি তাই আমরা আমাদের পশুকে জবাই করব এবং আমাদের মাথার চুল কেটে ফেলব এবং উমরাহ না করেই ফিরে যাব।’ তারা সবাই অনেক কষ্ট পাচ্ছিলেন, কেউই নড়ছিলেন না। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন যে তিনি নির্দেশ দেওয়ার পরেও কোন সাহাবিই তা পালনে জায়গা থেকে নড়ছিল না। তাই তিনি তার ক্ষুদ্র তাঁবুতে ফিরে গেলেন। উম্মে সালামাহ (রা.) সেখানে ছিলেন এবং তিনি দেখলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদ্বিগ্ন মুখমন্ডল। তিনি সবই শুনেছেন কি ঘটেছে। তিনি আল্লাহর নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পরামর্শ দিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমার মাথায় একটি আইডিয়া রয়েছে। আপনি বাইরে যান এবং নিজের মাথা কামিয়ে ফেলুন এবং আপনার পশুকে কুরবানি করুন। আপনি যদি কিছু না বলে এমনটা করেন, তাহলে তারাও আপনাকে অনুসরণ করবে।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি তাহলে এটাই করব।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী একটি নির্দেশনা দিলেন আর পুরো সেনাবাহিনী তা অনুসরণ করল, সুবহানআল্লাহ।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কথা না বলেই তার পশু কুরবানি করলেন এবং যারা চুল কামানোর দায়িত্বে ছিল তাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘তোমরা আমার চুল কামিয়ে দাও।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখে অন্যরাও তার অনুকরণ করতে লাগল। উম্মে সালামাহ (রা.) এসব দেখে হেসে বললেন, ‘আমি কি আপনাকে বলিনি?’
এই ছিলেন অসাধারণ এক নারী, উম্মে সালামাহ (রা.)। সাহাবাদের মধ্যে থেকে অনেকেই তার শিষ্য ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই সবার শেষে মৃত্যূবরণ করেন। তিনি ৯০ বছর বয়সে ৬১ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন যা আইশা (রা.) এর মৃত্যুর তিন বছর পর ছিল। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিলেন। আইশা (রা.) এর মৃত্যুর পর মানুষ তার কাছেই এসে প্রশ্ন করত। তিনি পুরুষদের সাথে পর্দার আড়ালে থেকেই কথা বলতেন। তাকে বাক্বীতে দাফন করা হয়।