মেয়েটা বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হয়েছে। এক যুগেরও আগের কথা। মেয়েটাকে আমি চিনি না। তবে ছেলেটাকে চিনি। তখন আমি বিদেশে পড়াশুনা করছি। ছেলেটাও বাংলাদেশ থেকে এসছে পড়াশুনা করতে। সেই সূত্রে পরিচয়।
রাতভর দেশে থাকা এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলে বেড়ায়। অন লাইনে পরিচয় হয়েছে। এরপর ছেলেটা একটা সময় দেশে গিয়ে মেয়েটার সঙ্গে দেখা করেছে। শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে। ছেলেটা আবার বিদেশে ফেরত এসছে। একদিন আমাকে বলছে
এই মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না। ওকে এখন আর ভালো লাগে না।
শুনে তো আমার চোখ কপালে উঠার জোগাড়! যার সাথে রাতের পর রাত কথা বলে বেড়িয়েছে। দেশে গিয়ে দেখা করেছে। শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। তাকে আর ভালো লাগছে না! আমি ভাবছিলাম মেয়েটার কথা। দেশে থাকা এই মেয়েটার কি হবে? এই ভেবেই ভয়ানক খারাপ লাগছিলো। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক ছেলেটাকে রাজি করাতে হবে। কিন্তু সে রাজি হতেই চাইছে না! তার পরিবার নাকি এই মেয়েকে মেনে নেবে না। আমি বললাম- দেশে গিয়ে আমি দরকার হয় পরিবারের (বাবা-মায়ের) সাথে কথা বলবো।
দেশে গেলাম ছেলেটার বাবা-মায়ের সাথে কথা বললাম। মেয়েটার সাথে দেখা করলাম। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। মেয়েটার না জায়গা হচ্ছে নিজের বাড়িতে। না ছেলেটার বাড়িতে। একটা ভয়ানক পরিস্থিতি। আমার কোন দরকার নেই এই পরিস্থিতে জড়িয়ে পরার। ওদের সমস্যা ওরা দেখুক। কিন্তু আমি খুব ভালো করে জানতাম ছেলেটা দিব্যি বিদেশে বসে আরামে থাকবে। এর কিছু দিন পর দেশে গিয়ে সুন্দর এবং কচি দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করবে! মেয়েটার জীবনে কি নেমে আসবে কে জানে! স্রেফ মানবিকতার কথা চিন্তা করে ভাবলাম- দেখিই না চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো মেয়েটা যদি বিদেশ চলে যেতে পারে; তাহলে ছেলেটা বিদেশেই এই মেয়ের সাথে সংসার করবে।
ওই মেয়েকে আমি আমাদের ঢাকার বাসায় এনে রেখেছি। যেদিন সে বিদেশের প্লেন ধরবে; সেদিন বিদেশে থাকা আমার আরেক পরিচিত ছেলে ঢাকায় থাকা নিজেদের গাড়িতে আমাদের ঢাকার বাসা থেকে মেয়েটাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছে।
ছেলে এবং মেয়ে এরপর বিয়ে করেছে। তাদের সন্তানও হয়েছে। বিদেশে তারা সংসারও করছে এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে।যে ছেলেটা, বিশেষ করে মেয়েটার আমি এই উপকার টুকু করেছি; এরা এরপর আমার সাথে জীবনে কখনো যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। যেই মেয়েটার জীবন হয়ত দেশে থেকে ধ্বংস হয়ে যেত; যাকে আমি এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেছি; সেই মেয়েটা বিদেশে এসে সংসার করেছে ভালো কথা। এরপর কোন দিন পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনি- কেমন আছেন?
এই হচ্ছে উপকারের প্রতিদান। আজ এক যুগ পর ঘটনাটা লিখলাম। কারন এরপরও আমি মানুষজনের এমন উপকার করেছি এবং প্রতিবার ফলাফল একই হয়েছে- যাদের উপকার করেছি, এদের কারো সাথে দিন শেষে আমার সম্পর্ক নেই। এরা উপকার স্বীকার করা তো অনেক দূরের ব্যাপার, উল্টো পারলে ক্ষতি করে চলে গিয়েছে।
মানুষের উপকার করতে নেই। তাহলে দিন শেষে আবিষ্কার করবেন- যে মানুষটা আপনার ক্ষতি করছে; সে আর কেউ নয়; বরং যাদের আপনি কোন এক সময় উপকার করেছিলেন; তাদেরই একজন।