ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন ফারজানা হাসান। ভেবেছিলেন, ‘যাক বাবা! বিজ্ঞান নিয়ে পড়লেও অন্তত ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট-টার্কিট নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না।’ কিন্তু এমনই কপাল, দুই বছরের মাথায় ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নাম বদলে হয়ে গেল তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই)। ‘সার্কিট-টার্কিট’ নিয়েই পার করতে হলো বাকি বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টেলে কাজ করছেন এখন ফারজানা হাসান। সেখানেও সার্কিটের সঙ্গেই কাটে তাঁর সারা দিন।
ফারজানা একা নন, ইন্টেলে কাজ করছেন ঢাবির ইইই বিভাগের আরও দুই প্রাক্তন ছাত্রী—আকিলা শাহিনা ও সাবেরা ফাহমিদা। তিনজন এখন যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন। যদিও বাসা থেকে কাজ করতে হচ্ছে বলে অফিসে ছোটখাটো একটা পুনর্মিলনী করার সুযোগ এখনো তাঁদের হয়নি। আমরাও অনলাইনেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।ইন্টেলে কাজ পাওয়ার আগে তিনজনই ৫০টির বেশি চাকরির আবেদন করেছেন। নানা যাচাই–বাছাইয়ের পর অবশেষে সুযোগ পেয়েছেন বিখ্যাত এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। পথটা সহজ ছিল না। পেরোতে হয়েছে অনেকগুলো ধাপ। জানালেন, প্রত্যেকেই তাঁরা সাত ঘণ্টা লম্বা ইন্টারভিউ দিয়েছেন। আকিলা শাহিনা বলছিলেন, ‘এ বছরের শুরুর দিকে চাকরির আবেদন করতে শুরু করি। রেফারেন্স থাকলে প্রক্রিয়াটা হয়তো একটু তাড়াতাড়ি হয়। তবে অবশ্যই ধৈর্য থাকা জরুরি।’
ইইই পড়ার সময় ফারজানারা দেখেছেন, ক্লাসে ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৭-১৮ জন মেয়ে। ভেবেছিলেন, বাংলাদেশেই বুঝি চিত্রটা এমন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তাঁর ধারণা বদলেছে। জানালেন, সে দেশে প্রকৌশলে পড়াদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও কম। ইন্টেলের এই প্রকৌশলী বলছিলেন, ‘উন্নয়নশীল একটা দেশ থেকে আমরা সবাই সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে। যুক্তরাষ্ট্রের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেলে দেখবেন, সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আছে। প্রকৌশলে পড়ছে, গবেষণা করছে, এমন অনেক ছাত্রী আছে।’ মজার অভিজ্ঞতার কথাও বলছিলেন সাবেরা ফাহমিদা, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রেই পিএইচডি করেছি। এখানে দেখা যায়, কোনো শিক্ষকের অধীন একজন বাংলাদেশি পিএইচডি করতে এলে পরের বছরই সেই শিক্ষকের কাছে বাংলাদেশ থেকে এত বেশি আবেদন আসতে শুরু করে যে তিনি ভাবেন, বাংলাদেশে তিনি বুঝি সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন! সব বিশ্ববিদ্যালয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে ছাত্রীদের সংখ্যাও।’
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আকিলা মনে করেন, কোনো মেয়ের যদি বিজ্ঞানে আগ্রহ থাকে, সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষার জন্য একবার ভিনদেশে যাওয়া উচিত। দেশের বাইরে পা রাখলে টের পাওয়া যায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় কিংবা এ–সংক্রান্ত পেশায় বাংলাদেশের নারীরা কতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। অন্যদের দিকে তাকালে নিজের মধ্যেও একধরনের ভালো করার তাগিদ বোধ হয়। ফারজানা যেমন বলছিলেন তাঁদের এক শিক্ষকের কথা, ‘আমাদের শিক্ষক স্বর্ণালি ইসলামও যেমন ইন্টেলে চাকরি করেছেন। দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, এই তথ্যটুকু না জানলে হয়তো আমিও ইন্টেলে আবেদন করার সাহস পেতাম না।’