রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেপোরোজিয়া ও খেরসন এই চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এই নতুন অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে ঘোষণা দেন তিনি।
তিনি বলেন, ওই অঞ্চলগুলোতে বাস করা মানুষজন রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। তবে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের চার অঞ্চলে রাশিয়ার গণভোটকে ‘ন্যাক্কারজনক’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে।
আগামী কয়েকদিনে আনুষ্ঠানিক আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অঞ্চলগুলো রুশ ফেডারেশনভুক্ত হবে। চুক্তি সইয়ের পর এ সংক্রান্ত নথি যাবে রাশিয়ার সাংবিধানিক আদালতে। এরপর রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমা ও উচ্চকক্ষ ফেডারেল কাউন্সিলে এসব চুক্তি অনুমোদন পেতে হবে। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অনুমোদনের পর পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই চার অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার নথি সই করবেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ওই চার অঞ্চলে গত ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে খেরসনে পড়া ভোটের ৮৭ দশমিক ০৫ শতাংশই স্বাধীনতা এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অঞ্চলটির রুশপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জাপোরিজিয়াতেও মোট ভোটারের ৯৩ দশমিক ২৩ শতাংশ স্বাধীনতা ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। আর দোনেৎস্ক পিপলস রিপবালিকে ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ভোট পড়েছে ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ও ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ‘নতুন অঞ্চল’ ঘোষণা দিয়ে পুতিন বলেন, “রুশ ফেডারেশনের এই চার অঞ্চলকে কেন্দ্রীয় পরিষদ সমর্থন জানাবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কারণ, এটি লাখো মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তারা করতালির মধ্য দিয়ে পুতিনের এই ঘোষণাকে সমর্থন জানান। এরপর ইউক্রেইনে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, নিহত এই সেনারা রাশিয়ার বীর। তারা দেশের জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন।
ভাষণে পুতিন আরও বলেন, তিনি চান কিয়েভ ও পশ্চিমারা জানুক দনবাস অঞ্চলের বাসিন্দারা চিরদিনের জন্য রাশিয়ার নাগরিক হচ্ছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের উচিত জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো।
পুতিন বলেন, যেকোনো উপায়ে রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করবে। ভূখণ্ডে বাস করা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
ওদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনওই ইউক্রেনের অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার এই চেষ্টাকে স্বীকৃতি দেবে না।
বিবিসি জানায়, শুক্রবারের অনুষ্ঠানের ভাষণে পুতিন ইউক্রেইন এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ইউক্রেইনকে অবিলম্বে গোলা ছোড়া বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি জোর দিয়ে এও বলেছেন যে, লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরোজিয়া এবং খেরসন নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়ার কারণে এ বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হবে না। পশ্চিমারা রাশিয়াকে ভেঙে ফেলতে চাইছে বলেও পুতিন ভাষণে উল্লেখ করেন।
পশ্চিমাদেরকে ‘লোভী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তারা চায় রাশিয়া তাদের কলোনিতে পরিণত হোক। সেকারণে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড ওয়ার’ পরিচালনা করছে।
“তারা আমাদেরকে একটি মুক্ত সমাজ হিসাবে দেখতে চায় না। দাসত্বের শৃঙ্খলে দেখতে চায়। তাদের রাশিয়াকে দরকার নেই। আমাদের রাশিয়াকে দরকার”, বলেন পুতিন।