ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে নিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনারা। শহরটি চারপাশ থেকে রুশ সেনারা ঘিরে ফেলার দাবি করেছে। তবে পূর্ব ইউক্রেনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি এলাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোগ সড়ক এখনো দখলে নিতে পারেনি রুশ সেনারা।
ওই সড়কটি দখল নিতে পারলেই সেভেরোদোনেৎস্কের সঙ্গে ইউক্রেনের অন্য শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। খবর বিবিসির।
সেভেরোদোনেৎস্ক অঞ্চলের সামরিক প্রশাসনের প্রধান শেরহি হাইদি বলেন, ‘লুহানস্কের সঙ্গ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।’
রাশিয়ার অন্যতম লক্ষ্য হল সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে নেওয়া। দেশটির অন্যতম বড় এই শহরটির উপকণ্ঠে তীব্র লড়াই চলছে। বিবিসি বলছে, রুশ সেনারা যদি সেভেরোদোনেৎস্ক থেকে বাখমুটের রাস্তাটি দখল করতে পারে তবে পুরো শহরটিকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হবে তারা।
শেরহি হাইদি বলেন, শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় লড়াই চলছে। তবে এখনো শহরে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো যাচ্ছে।
শেরহি বিবিসিকে বলেছে, সেভেরোদোনেৎস্কের পরিস্থিতি খুব খারাপ। ২৪ ঘণ্টা সেখানে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া রুশ সেনারা মর্টারের গোলাসহ নানা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে হামলার পাশাপাশি বিমান হামলা করছে। গত মঙ্গলবার রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণে ছয়জন নিহত হয়েছেন।
ইতিমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর তিন মাস পার হয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাস পুরোপুরি দখলের দিকে মনোনিবেশ করছে রুশ সেনারা।
রুশ সেনারা যদি এখন পাশের লিসিচানস্ক শহরটিরও দখল নিয়ে নেয় তবে পুরো লুহানস্ক অঞ্চল তাদের হাতে চলে যাবে। লুহানস্ক অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রধান রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর বোমা হামলার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, সেভেরোদোনেৎস্কে ১৫ হাজার বেসামরিক লোকজন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন।
হাইদি বলেন, ‘তারা শহরটির দখল নিতে পারবে না দেখেই পুরো ধ্বংস করে দিচ্ছে যাতে আমাদের সেনারা শহর ছেড়ে চলে যায়।’
ইতিমধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর তিন মাস পার হয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাস পুরোপুরি দখলের দিকে মনোনিবেশ করছে রুশ সেনারা। মারিউপোলের পর গত শুক্রবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র লুহানস্কের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার কাছাকাছি যাওয়ার দাবি করেছিলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু।
এখন পর্যন্ত পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে তা স্বীকার কার হয়নি। তবে গতকাল রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়, দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মস্কোর একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করার বিষয়টি দেখানো হয়। সেখানে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে আহত সেনাদের দেখতে যান।
বিবিসি জানায়, হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে পুতিনকে বলতে শোনা গেছে, এক সেনাকে তিনি বলেছেন, তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে গর্ব করবেন।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত কঠিন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, রাশিয়া কোনো সময়সীমা তাড়া করছে না। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই সোইগু বলেছেন, ইউক্রেনে হামলার গতি কিছুটা কমেছে।
জেলেনস্কির পক্ষ থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোকে রাশিয়ান আগ্রাসনের মুখে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার সব বাণিজ্য বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া রুশ সেনাদের প্রতিরোধে রকেট লঞ্চারসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র চেয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে রুশ বিমান হামলার মধ্যেও দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝিয়াতেও গত বুধবার সকালে নতুন করে হামলা হয়েছে।
রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দখলের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলও রয়েছে। এ নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনে অভিপ্রায় স্পষ্ট। তিনি নতুন একটি ডিক্রি স্বাক্ষর করেছেন যাতে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের রুশ-অধিকৃত এলাকার নাগরিকদের রাশিয়ান পাসপোর্ট পেতে সহজ হয়।
এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ কবে থামবে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না বলে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় তুরস্ক ও বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতারা একাধিকবার বৈঠক করলেও তাতে কার্যত কোনো ফল আসেনি। আলোচনা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।