-বোন, তুমি আমার স্বামীকে বিয়ে করো।
-হেই নূহা! আর ইউ ম্যাড? হাউ ইজ ইট পসিবল? আমার হাজবেন্ড আছে। সে এখন বিদেশে। আর সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট কথা হচ্ছে, হি ইজ এ মিলিওনেয়ার। বাট রাফানের তো এত টাকা নেই। ও আমার সাথে শপিং এ বের হলে আমাকে মাত্র ৩টা ড্রেসই কিনে দিতে পারে না, হা হা হা! বাট রাফান ইজ এ ভেরি স্মার্ট এন্ড চার্মিং বয়। তাকে ভালবাসা যায়, বাট বিয়ে! ঊফ! নো ওয়ে।
-তাহলে, তোমরা কি এভাবেই বেপরোয়া হয়ে ঘুরবে শুধু! আই মীন জাস্ট টাইম পাসিং?
-ইয়াহ্, বেইবি! এইতো বুঝেছো। আর এটাতে কি আর প্রবলেম? কাম অন ডিয়ার, ইট’স এ নরমাল ম্যাটার।
-নাহ্ ফ্লোরা! এটা আমার কাছে মোটেও নরমাল ম্যাটার নয়। তুমি হয় রাফানকে ছেড়ে দাও, না হলে বিয়ে কর। কিন্তু এরমভাবে আমার সংসারটা নষ্ট করো না প্লিজ। আমি তোমার কাছে হাত জোড় করছি বোন!
কথাগুলো বলেই নূহা কাঁদতে শুরু করলো। কান্নায় ওর নিকাব ভিজে যাচ্ছে। সে কিছুতেই কান্না আটকাতে পারছে না। তার ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। চোখের সামনে নিজের স্বামীর অধঃপতনেও সে নিজের মনোবল শক্ত করে রেখেছিল। ভরশা ছিল অবশ্যই তার স্বামী পরিবর্তন হবে, ফিরে আসবে শুধুমাত্র তার হয়ে। কিন্তু একবছর ধরে নিজের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে আর পেরে উঠতে পারে নি। ছুটে এসেছে ফ্লোরার কাছে। একটু আশা নিয়ে। হয়তো একটি মেয়ে হয়ে সে তার কষ্টটা বুঝতে পারবে। কিন্তু নূহা হেরে যাচ্ছে ফ্লোরার কাছেও।
-নূহা, স্টপ ইট। মেয়েদের এত কাঁদতে হয় না। এই নাও টিস্যুর বক্স। চোখ মুখ মুছে ফেল। এই যে কি একটা মুখের উপর দিয়ে ঢেকে রাখো। এটা কেন করো? কত সুন্দর তোমার মুখটা! এটা প্রকাশ করবে। এই যে এত প্যাকেট হয়ে থাকো জন্যই তো রাফান তোমাকে এভয়েড করে। ও চায় তুমিও আমার মতো খোলা চুলে ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়ে ওর সাথে রিক্সায় ঘুরো। ঠোঁটে কড়া করে লাইট কালার লিপস্টিক ইউস করবা। আর মোটা করে কাজল দিয়ে তোমার চোখ রাঙ্গাবা। রাফান লোককে দেখাতে চায় তার বউ কত্ত সুন্দরী। বাট তুমি তো ওর ইচ্ছে পূরণ করতে পারো না। কিসব হাবিজাবি নাকি বোঝাও ওকে!
নূহা এরই মাঝে চোখমুখ মুছে ফ্লোরার দিকে তাকালো। ঠোঁটে স্মিত একটু হাসির রেখা টেনে তাকে বললো, “ফ্লোরা, আমি রাফানকে ভালবাসি ঠিকই। বাট আমার রবকে আমি সবচাইতে বেশি ভালবাসি এবং তারপর আমার নবী (সা:) কে। ঠিক তার পরের স্থানটা রাফানের। রাফানের এই ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আমার রব; যাঁকে আমি এত ভালবাসি তাঁকে তো অসন্তুষ্ট করতে পারি না। আমার সৌন্দর্য আল্লাহ্ যা দিয়েছেন আমি তার বিকাশ আমার স্বামীর সামনে ঘটাতে পারি। তবে সেটা অন্য কোনো পুরুষের সামনে নয়। আল্লাহ্ এই সীমারেখাটা টেনে দিয়েছেন। আমার রব কুরআনে বলেছেন….
-হয়েছে, হয়েছে। থাম এইবার। আমার এতসব শুনে কোনো কাজ নেই। তারচেয়ে বলো তুমি কী খাবে? চা নাকি কফি?
- না না! আমার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। এবার আমাকে উঠতে হবে। তুমি আমার বিষয়টা একটু ভেবো, ফ্লোরা। আমি যদি তোমার নিজের বোন হতাম! তুমি কী চাইতে তোমার বোনের সাথে এরম কিছু হোক, সহ্য করার মতো এটা? তুমিই বলো তো আমাকে?
-হা হা হা! কিসব বলো না বলো! আরে বাবা, বিষয়টা তুমি এত জটিল করে তুলছো কেন? একটা মানুষের জীবনসঙ্গী বাদেও তার একটা আলাদা লাইফ থাকে। সেটা সে নিজের মতো করে ইনজয় করবে। এটাই তো নিয়ম। তুমি সেকেলে আছো এখনও। এই দিক দিয়ে রাফানের সঙ্গে তোমার ম্যাচ করে না।
নূহা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, ” ঠিক আছে, আসি তবে।” আর দেরী না করে সে ফ্লোরার বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো।
সে বুঝতে পেরেছে ফ্লোরাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। তার সাথে এতদিন থেকেও যেখানে তার নিজের স্বামীই ইসলামকে বুঝতে পারছে না, সেখানে ফ্লোরার মতো একটা নাস্তিক মেয়ে কী আর বুঝবে!
.
ফ্লোরার বাসা থেকে নূহাদের বাসা এক ঘন্টার পথ। নূহা রিক্সা নিয়ে এসেছিল। রিক্সায় ঘুরতে ওর খুব ভাললাগে। কিন্তু আজ মনটা একদমই ভাল নেই। আজ তার খুব হাঁটতে ইচ্ছে করছে। তাই সে কোনো রিক্সা না নিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। গন্তব্য তাদের বাসা, মানে রাফান আর নূহার বাসা। ঐ বাসাটা কী আসলে নূহারও বাসা? রাফানের অবহেলায় ঐ বাসাটিকে আর নিজের বাসা ভাবতে ভালোলাগে না তার।
নূহার মনে আজ ভাবনাদের পসরা বসেছে। কত রকমের ভাবনা যে তার কল্পনায় এসে ভীড় জমাচ্ছে! সে যেন সেই মেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে সে হিসেব কষছে ভুল আর সঠিকের। তার ভুল কী ছিল? রাফান কেন বদলে গেল? রাফান কী বদলে গিয়েছে নাকি রাফান তার জায়গায় ঠিক আছে? বদলে তো গিয়েছে নূহা। সে দ্বীনের আলোর সন্ধান পেয়েছিল। তারপর থেকে তাকে পাড়ি দিতে হচ্ছে কতশত বন্ধুর পথ।
সে হেদায়েত পাওয়ার পর থেকেই রাফান তাকে এড়িয়ে চলছে। একই বাসায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে থাকলেও তাদের মাঝে নেই কোনো মায়ার বাঁধন। নূহা তার পরিবারকেও কিছু বলতে পারছে না। বললেও তারা বুঝবে না, উল্টো তাকেই দোষারোপ করবে। সেক্যুলার ফ্যামিলিগুলো এমনই হয়। তার একমাত্র আশ্রয়স্থল তাঁর রব। আর রবের সাথে সে কথা বলে সিজদায়। মালিকের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপন চালিয়ে যায়। তাকে কেউ না বুঝলেও তার রব তাকে খুব বোঝে। রব্বে কারীমকে সব কথা বলার পরপরই তার অন্তরে নেমে আসে প্রশান্তি। তখন তার খুব মনে পড়ে কুরআনের সেই আয়াত, “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে।”[৯৪:৬]
রাফানকে বুঝাতে বুঝাতে নূহা ক্লান্ত হয়ে যায়, তবুও রাফান বুঝতে চায় না। কুরআনের কোনো বাণীই যেন তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। তখন নূহা নিজেকে বোঝাতে আল কাসাস এর ৫৬ নং আয়াত বার বার পড়তে থাকে। সেখানে আল্লাহ্ বলেছেন, “তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে তুমি হেদায়েত করতে পারবে না, তবে আল্লাহ্ যাকে চান তাকে অবশ্যই হেদায়েত দান করেন, তিনি ভাল করেই জানেন কারা এ হেদায়েতের অনুসারী হবে।”
নূহা খুব করে চায় আল্লাহ্ যেন তার রাফানকে হেদায়েত দান করেন। আল্লাহর উপর ভরশা করে সে এই আশাতেই থাকে। অপেক্ষা প্রহর গুণতে থাকে তার প্রিয়ম কবে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হবে।
Writer: Mahazabin Sharmin Priya