আল্লাহ সুবহানআল্লাহ তায়ালা! কি অপূর্ব তার নাম এবং পরিচয়! আমরা আমাদের ইমানকে আরো চাঙ্গা করতে চাই। স্রষ্টার আরো নিকটবর্তী হতে চাই। তিনি ছাড়া আর কারো ভয়ে ভীত হতে চাই না। তাকে ছাড়া আর কাউকে খুশি করতে চাই না। আল্লাহ সুবহানআল্লাহ তায়ালার পরিচয় জানার জন্য কুরআনের ৫৭ নং সূরা আল-হাদিদে যাওয়া যাক যেখানে আল্লাহ তার পরিচয় আমাদের কাছে উন্মোচন করেনঃ
سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿١﴾لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿٢﴾هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿٣﴾
আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব তাঁরই। তিনিই জীবন দেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। তিনিই প্রথম ও শেষ এবং প্রকাশ্য ও গোপন; আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা আল হাদীদ ৫৭:১-৩)
لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ ﴿٥﴾
আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব তাঁরই এবং আল্লাহরই দিকে সকল বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আল হাদীদ ৫৭:৫)
কেবল তিনিই জীবন ও মৃত্যুর মালিক। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আসমান এবং জমিনের সবকিছুই আল্লাহর প্রশংসায় বিভোর আর তিনিই সর্বশক্তিমান। সর্বজ্ঞানী। ইয়া রব!
আপনি কি এমন কিছুর কথা জানেন যে আল্লাহর একটি বৈশিষ্ট্যও ধারণ করে? সূরা আল-আন’আম এ আল্লাহ বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ﴿٥٩﴾
আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে। (সূরা আল আন’আম ৬:৫৯)
তার কাছে অদৃশ্যের জ্ঞান রয়েছে যা তিনি ছাড়া আর কেউই জানেনা। তিনি সবকিছু সম্পর্কে জানেন যা রয়েছে মাটিতে এবং সাগরে। এমন কোন পাতা গাছ থেকে পড়েনা যা সম্পর্কে তিনি বেখবর। প্রতিটি ধূলিকণা, পাথর সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত। তিনি ছাড়া আর নেই কোন ইলাহ।
আমি শুধু আল্লাহর একটি সৃষ্টির বর্ণণা দিতে চাই। তিনি আর কেউ নন, ফেরেশতাদের সর্দার জিবরীল (আ.)। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখেছেন তার প্রকৃত রূপে।
তিরমিজির একটি হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তার ডানার সংখ্যা ৬০০ এর চেয়ে কম ছিল না। (হাদিস নং ৩২৭৭) একেকটা ডানা এত বড় যে তা দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং আকাশকে ঢেকে ফেলেছিল। একটি ছড়ানো ডানা সকল মেঘ, সূর্য চন্দ্রকে ঢেকে দিয়েছিল, নীল আকাশের প্রতিটি ইঞ্চি ঢাকা পড়েছিল। তাহলে ৬০০টা ডানা কত বড়? আর এটা যদি কেবল আল্লাহর একটি সৃষ্টির মাহাত্ম্য হয় তাহলে স্রষ্টার সৌন্দর্য কতটা বেশী!
আল্লাহর দ্বিতীয় আরেক সৃষ্টির দিকে নজর দেয়া যাক। তারা সেইসব ফেরেশতাগণ যারা আল্লাহর আরশকে বহন করছেন। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَفْصِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ، حَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ طَهْمَانَ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ أُذِنَ لِي أَنْ أُحَدِّثَ عَنْ مَلَكٍ مِنْ مَلاَئِكَةِ اللَّهِ مِنْ حَمَلَةِ الْعَرْشِ إِنَّ مَا بَيْنَ شَحْمَةِ أُذُنِهِ إِلَى عَاتِقِهِ مَسِيرَةُ سَبْعِمِائَةِ عَامٍ ”
আমাকে আল্লাহর এক ফেরেশতার বর্ণণা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে যারা আল্লাহর আরশকে বহন করছেন যে তাদের কর্ণ এবং কাঁধের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৭০০ বছর ভ্রমণের সমপরিমাণ। (সুনানে আবু দাউদ – ৪৭২৭; আল-আলবানি সহীহ বলেছেন)
আমাদের কাছে যেটা একটা হাতের সমান সেটা যদি ফেরেশতাদের ক্ষেত্রে ৭০০ বছরের দূরত্ব হয় তাহলে ফেরেশতার বিশালত্ব কতটা বেশী? আরশ বহনকারী একজন ফেরেশতা যদি এতটা বিশাল হন তাহলে স্বয়ং আরশের বিশালত্ব কত? আরশ যদি এতটা বিশাল হয় তাহলে তাতে আরোহিত মহাপরাক্রমশালী রাজত্বের একচ্ছত্র মালিক কেমন হবেন?
আমরা দৃষ্টিশক্তির নিয়ামত সম্পর্কে ভুলতে বসেছি। আমরা মনে করি, দেখার জন্য কেবল দুজোড়া চোখই যথেষ্ট কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ আছে যারা দুজোড়া চোখের মালিক, কিন্তু এরপরেও দেখতে পায় না। আল্লাহ সুবহানআল্লাহতায়ালাই আপনাকে দেখার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা ভাবি কেবল দুজোড়া কান থাকলেই আমরা শুনতে পাব। আবারও ভুল করছি। কত মানুষ আছে যাদের মাথার দুপাশে কান ঝুলে রয়েছে, কিন্তু তদ্বারা তারা শুনতে পায় না। আল্লাহই আমাদের শ্রবণের নিয়ামত দান করেছেন। হাঁটার জন্য কি কেবল দুটি পাই যথেষ্ট? আজ কত মানুষ পা থাকা সত্ত্বেও চেয়ারে বসে চলাফেরা করে। আল্লাহ আমাদের হাঁটার সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহই দিয়েছেন, আপনি এর জন্য সামান্যতমও দায়ী নন।
আল্লাহর আপনাকে কোন প্রয়োজন নেই, আমাকে কোন প্রয়োজন নেই, আমাদেরকে কোন প্রয়োজন নেই। এটা আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে কারণ আক্বিদার সাথে এটা জড়িত, তাই আপনি যখন আপনার রব্বের দরবারে সিজদায় উপনীত হবেন তখন আপনি যেন তার সামনে বিনয়ী হতে পারেন। যখন তার ইবাদত করবেন আপনার অন্তরে যেন গর্ব জায়গা না নিতে পারে, যেন অহংকারের সৃষ্টি না হয়। কারণ যেকোন মূহুর্তেই আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি আছেন কারণ শুধুমাত্র আপনার রব চেয়েছেন বলে। তার রহমতের কারণেই আপনি এতদূর আসতে পেরেছেন। এর পিছনে আপনার সামান্যতম ভূমিকাও নেই। একদম নিশ্চয়তার সাথে বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহ সকল রাজাদের রাজাধিরাজ।
বর্তমানে মুসলিমরা ভীত, তারা ভয় পায় কুফফারদের, ভয় পায় পশ্চিমাদের, আইনকে ভয় পায়, নিয়মকে ভয় পায়, এটাকে ভয় পায়, ওটাকে ভয় পায়।
ওয়াল্লাহি আমার ভাইয়েরা, আমি আল্লাহর নামে শপথ নিয়ে বলছি আপনার আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।প্রতিটা মানুষ যারা গত হয়েছেন, যারা বেঁচে আছেন এবং যারা ভবিষ্যতে দুনিয়ায় আসবেন; প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা জ্বিন, প্রতিটা প্রাণী যারা ভূমিতে বিচরণ করে, প্রতিটা পাখি যা আকাশে উড়ে বেড়ায়, প্রতিটা মাছ যা সমুদ্রে সাঁতরে বেড়ায়, প্রতিটা ভূমি, প্রতিটা দেশ তারা তাদের পুরো গভর্নমেন্ট, পুরো মিলিটারি ফোর্স, পুরো ক্ষমতা, পুরো অর্থ-সম্পদ নিয়ে একত্রিত হলেও আল্লাহর সামনে তারা সকলেই অসহায়।
প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা জ্বিন, প্রতিটা নক্ষত্র, প্রতিটা গ্রহ, প্রতিটা গ্রহ, আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল সহ বিলিয়ন বিলিয়ন ফেরেশতা সবকিছু মারা যাবে। সব মারা যাবে। কিচ্ছু নড়বেনা, কিছুই থামবেনা, দেয়ার মত থাকবেনা কেউ, কিছু নেয়ার মত থাকবেনা কেউ, কিছু বাড়বেনা কিছু কমবেওনা আল্লাহকে ছাড়া। আল্লাহর কিছুকে প্রয়োজন নেই, কাউকে প্রয়োজন নেই। কোন নবি, কোন ফেরেশতা, কোন জ্বিন, কোন মানুষ কাউকেই না। আমাদেরই তাকে প্রয়োজন। তিনিই আল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, যিনি চিরবিরাজমান।
আপনি হয়ত বলবেন, কিন্তু ভাই আমি তো একদম সুস্থভাবে এই দুনিয়ায় বেঁচে আছি। কিন্তু মনে রাখুন, আপনার বেঁচে থাকা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি না থাকতেন, আপনি আসতেন কোথা থেকে? তিনিই প্রথম, যার নেই কোন শুরু। তিনিই শেষ, কিন্তু তার নেই কোন সমাপ্তি। তিনিই আল্লাহ সুবহানআল্লাহতায়ালা। আল-মালিক, রাজাধিরাজ।
কিয়ামতের দিবসে পরাক্রমশালী আল্লাহ্ যখন সকল কিছু ধ্বংসের নির্দেশ দেবেন, তখন প্রতিটা প্রাণী, প্রতিটা মানুষ, প্রতিটা জ্বিন, প্রতিটা ফেরেশতা ধ্বংস হয়ে যাবে। একপর্যায়ে, অস্তিত্বে আর কোন কিছুই থাকবেনা। আল্লাহ্ (সুবহানআল্লাহতায়ালা) ছাড়া। আল্লাহ্ সেদিন বলবেন, কোথায় সেই রাজারা? কোথায় সেই রাজারা যারা নিজেদের রাজা ভাবত? কোথায় রাজপুত্ররা? আজ জালিমেরা কোথায়? কোথায় সেই ভীতি ছড়ানো গ্যাংস্টার? কোথায় সেই যুবকেরা যারা নিজেদের বিশাল কিছু মনে করত? কোথায়? কোথায় তাদের সন্তানেরা?
আল্লাহ্ এরপর নিজেই জিজ্ঞেস করবেন, আজ রাজত্ব কার? কার?
উত্তর দেয়ার মত কেউ থাকবেনা সেদিন। আল্লাহ্ (সুবহানআল্লাহ্তায়ালা) নিজে উত্তর দেবেন, রাজত্ব তো কেবল আল্লাহর। একমাত্র আল্লাহর।
আল্লাহ্ বলেনঃ
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ ﴿١٨﴾
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সূর্য, চাঁদ, তারকারাজী, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা আল-হাজ্জ্ব ২২:১৮)
অস্তিত্বে থাকা প্রতিটা সৃষ্টি আল্লাহর সামনে সিজদাবনত। আমরা তা খালি চোখে দেখতে হয়ত পাইনা। এত বিশাল সব সৃষ্টি, গ্রহ নক্ষত্র গ্যালাক্সি সবাই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত। বিশাল ফেরেশতারা আল্লাহর ইবাদত করে চলছেন রাতদিন। আল্লাহর এত সৃষ্টির ভীড়ে অত্যন্ত দুর্বল দুটো সৃষ্টিই কেবল আল্লাহর সামনে সিজদার ব্যাপারে অবাধ্যতা করে আর তারা হল মানুষ এবং জ্বিন।
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ ﴿٦﴾الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ ﴿٧﴾فِي أَيِّ صُورَةٍ مَا شَاءَ رَكَّبَكَ ﴿٨﴾كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِالدِّينِ ﴿٩﴾وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ﴿١٠﴾
হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন, অতঃপর তোমাকে করেছেন ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছেমত আকৃতিতে গঠন করেছেন। না (তোমাদের এই বিভ্রান্তি মোটেই সঠিক নয়), তোমরা তো (আখেরাতের) শাস্তি ও পুরস্কারকে অস্বীকার করে থাক; অবশ্যই তোমাদের উপর নিযুক্ত আছে তত্ত্বাবধায়কগণ। (সূরা ৮২:৬-১০)