শহর||লোকে বলে- ইট পাথরের শহর।আসলেই তাই।শহর মানেই তো ইট,কাঠ,পাথর, বড় বড় দালান-কোঠা।বাড়ি,গাড়ি,লোকের ভীড়।শহরের সবাই রাত দিন ছুটে চলে।শহরের রাস্তায় কতরকম বাহনের ব্যস্ততা;মানুষের ব্যস্ততা।এক ফোঁটা দম ফেলার সময় নেই কারও।বাচ্চাগুলো স্কুলে যায়।স্কুল শেষে রয়েছে প্রাইভেট,কোচিং,টিউশন,নাচের ক্লাস,গানের ক্লাস,আর্টের একাডেমী আরও কত কি।বড় মানুষগুলোও রোবটের গতিতে ছুটে চলে নিজ নিজ কাজে- অফিসে,বাজারে,কেউ বা বাচ্চাদের পিছনে।শহরটায় তাই সারাদিনই ব্যস্ততা। নিষ্প্রাণ এই শহরে থাকতে থাকতে অনেকেই যেন হাঁপিয়ে ওঠে।তারা মূলত গ্রামের প্রতিনিধি। গ্রামের মুক্ত বাতাসে অভ্যস্ত যারা, তাদের কাছে শহরের বাতাস বিষের মত।গোটা শহরটা তাদের কাছে একটা বিষনগরী।বড্ড নিষ্প্রাণ এই শহর।কিন্তু আসলেই কি তাই?
কর্মব্যস্ত এই জীবনে ছুটে চলতে চলতে আমরা কি একবারও শহরটার দিকে তাকাই?কখনও কি বোঝার চেষ্টা করি অট্টালিকায় ঢাকা এই শহরেরও একটা মায়া আছে?এই শহরও যে কিছু বলতে চায়-তা কি আমরা শোনার চেষ্টা করি? বোধহয় না!
স্কুল বা অফিসের গাড়ি ধরার জন্য দৌঁড়তে দৌঁড়তে একবার থেমে গেলে কেমন হয়?পাঁচটা মিনিট না হয় দাঁড়িয়ে গেলাম।প্রতিদিন ব্যস্ততার চোখে যে শহরকে দেখি,একবার না হয় স্থিরদৃষ্টিতে মনের চোখ দিয়েই তাকে দেখলাম।কে বলতে পারে,হয়তো শহরটাও কিছু বলতে চায়।কিছু জানাতে চায়।মানুষের জটিল কথা,গাড়ি-ঘোড়ার হর্ণ,হকারের চিৎকার এসব ছাপিয়ে সেই কথাগুলো হয়তো আমাদের কান পর্যন্ত আসতে পারেনা।
তাই ছোটাছুটির ফাঁকে পাঁচটা মিনিট দাঁড়িয়ে যাও।চারপাশটা দেখো;এই শহরটাকে দেখো।যে শহরের বুকে কাঠখট্টা মার্কা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে, সবুজ সুন্দর গাছগুলোও তো সেই শহরের বুকেই স্থান পেয়েছে।প্রাণবন্ত পাখিগুলোও উড়ে বেড়ায় শহরের আকাশে।তাই যতটা প্রাণহীন ভাবা হয়,এই শহর কিন্তু ততটা প্রাণহীন হয়। অদ্ভূত এক মায়া আছে এই শহরে।এখানে থাকলে তা হয়তো বুঝতে পারবে না।কিন্তু অনেকদিনের জন্য বাইরে কোথাও গেলে দেখবে ঠিকই এই শহরের কথা মনে পড়বে;মন কেমন করবে।শহরের মায়ায় যে তুমি আচ্ছন্ন,তা তখন ঠিকই বুঝবে।
তাই শহরটাকে শুধু একটা বাসস্থান বা কর্মস্থান না ভেবে একটু আপন করে নাও।শহরের সৌন্দর্যটা বোঝার চেষ্টা করো।এর সৌন্দর্য আরও বাড়ানোর চেষ্টা করো।দিনশেষে,আমাদেরকে নিয়েই তো আমাদের শহর।
কলমে- দীপা সিকদার জ্যোতি